উত্তর : উষ্ণতার তারতম্যের ভিত্তিতে বায়ুমণ্ডলকে ছয়টি স্তরে ভাগ করা যায় ।
(১) ট্রপোস্ফিয়ার : এটি বায়ুমণ্ডলের সবচেয়ে নীচের ভূপৃষ্ঠ সংলগ্ন স্তর যেখানে বায়ুমণ্ডলের যাবতীয় পরিবর্তন দেখা যায় ।
বিস্তার : এই স্তর নিরক্ষীয় অঞ্চলে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ওপরের দিকে 18 কিমি , ক্রান্তীয় অঞ্চলে 12.5 কিমি এবং মেরু অঞ্চলে প্রায় ৪ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত ।
বিশেষত্ব : (i) এই স্তরে প্রতি 1000 মিটার উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে 6.4° সে হারে উন্নতা হ্রাস পায়, একে স্বাভাবিক তাপহ্রাস হার বলে ।
(ii) ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমায় বায়ুর উষ্ণতা কমে হয় – 50° সে থেকে – 65° সে ।
(iii) এই স্তরে বায়বীয় উপাদানের মধ্যে অধিক মাত্রায় ধূলিকণা ও লবণকণা থাকে ।
(iv) ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমাকে ট্রপোপজ বলা হয় । ট্রপোপজে উষ্ণতা কমেও না বাড়েও না , স্থির থাকে ।
(v) বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগ ( বজ্র, বিদ্যুৎ, ঝড়বৃষ্টি ) এই স্তরে দেখা যায় , তাই একে ক্ষুব্ধমণ্ডল বলা হয় ।
(২) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার : ট্রপোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বসীমা ট্রপোপজের ওপরের বায়ুমণ্ডলীয় স্তরটি স্ট্র্যাটোস্ফিয়ার নামে পরিচিত ।
বিস্তার : ট্রপোপজের ওপর থেকে অর্থাৎ প্রায় 20 কিমি থেকে 50 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত ।
বিশেষত্ব : (i) এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তাপমাত্রা ক্রমশ বাড়তে থাকে ।
(ii) স্তরটিতে সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ধূলিকণা ছাড়া কোনো জলীয়বাষ্প না থাকায় কোনো প্রকার বায়বীয় গোলযোগ ঘটে না অর্থাৎ আবহাওয়া শাস্ত থাকে তাই একে শান্তমণ্ডল বলা হয় ।
(iii) এই স্তরে 20-50 কিমি উচ্চতায় ওজোন ( O³ ) গ্যাসের অস্তিত্ব লক্ষ করা যায় । যা ওজোনোস্ফিয়ার নামে পরিচিত । এটি সূর্য থেকে আসা অতি বেগুনি রশ্মির হাত থেকে জীবজগৎকে রক্ষা করে ।
(iv) এই স্তরে বায়বীয় গোলযোগ না হওয়ায় জেটপ্লেনগুলি চলাচল করতে পারে ।
(v) এই স্তরের ঊর্ধ্বাংশে তাপমাত্রা বেড়ে হয় –4° সে ।
(vi) স্ট্র্যাটোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বাংশকে স্ট্র্যাটোপজ বলা হয় ।
(৩) মেসোস্ফিয়ার : স্ট্র্যাটোপজের ওপরে বায়ুমণ্ডলের তৃতীয় স্তরটিকে মেসোস্ফিয়ার বলা হয় । গ্রিক শব্দ 'Meso' কথাটির অর্থ Middle অর্থাৎ মধ্যমভাগ ।
বিস্তার : ট্রপোপজের ওপর থেকে প্রায় ৪০ কিমি উচ্চতা পর্যন্ত এই স্তরটি বিস্তৃত ।
বিশেষত্ব : (i) উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এই স্তরে উষ্ণতা অতি দ্রুত হারে কমতে থাকে ।
(ii) মেসোস্ফিয়ারের বায়ুর চাপ খুবই কম ।
(iii) মহাকাশ থেকে আগত মহাজাগতিক বস্তুকণা , উল্কাপিণ্ডসমূহ এই স্তরে এসে পুড়ে ছাই হয়ে যায় ।
(৪) আয়নোস্ফিয়ার : মেসোপজের ঊর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের চতুর্থ স্তরটিকে আয়নোস্ফিয়ার বলে ।
বিস্তার : মেসোপজের ঊর্ধ্বে অর্থাৎ ভূপৃষ্ঠের 30 কিমি উচ্চতা থেকে 500 কিমি উচ্চতার মধ্যবর্তী অংশে এই স্তরটি অবস্থিত ।
বিশেষত্ব : (i) এই স্তরে উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উষ্ণতা দ্রুত বৃদ্ধি পায় ।
(ii) বায়ুমণ্ডলের সর্বাধিক উষ্ণতা এই স্তরে দেখা যায় তাই একে থার্মোস্ফিয়ার বলা হয় ।
(iii) এই স্তরে বস্তুকণা আয়নিত অবস্থায় থাকে বলে বেতার তরঙ্গ এখান থেকে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পুনরায় পৃথিবীতে ফিরে আসে এবং বেতার সংযোগ ঘটায় । আয়নোস্ফিয়ারের 90-160 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত অঞ্চলটি ‘কেনেলি - হেভিসাইড’ স্তর নামে পরিচিত ।
(৫) এক্সোস্ফিয়ার : আয়নোস্ফিয়ার বা থার্মোস্ফিয়ারের ওপরের স্তরটিকে এক্সোস্ফিয়ার বলা হয় ।
বিস্তার : এই স্তর থার্মোস্ফিয়ারের ওপরে অর্থাৎ 500 -750 কিমি উচ্চতা পর্যন্ত বিস্তৃত ।
বিশেষত্ব : (i) উচ্চতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে তুলনামূলক কম হারে এই স্তরের উষ্ণতা বৃদ্ধি পায় , প্রায় 650 কিমি উচ্চতায় উষ্ণতা বেড়ে হয় প্রায় 1240° সে ।
(ii) এই স্তরে হিলিয়াম ও হাইড্রোজেন গ্যাসের প্রাধান্য দেখা যায় ।
(৬) ম্যাগনেটোস্ফিয়ার : এক্সোস্ফিয়ারের ঊর্ধ্বে বায়ুমণ্ডলের সর্বোচ্চ স্তর তথা শেষ সীমাকে ম্যাগনেটোস্ফিয়ার বলা হয় ।
বিস্তার : (i) এই স্তরে সমস্ত বায়বীয় উপাদান আয়নিত অবস্থায় থাকে ।
(ii) এই স্তরের আনুমানিক উষ্ণতা প্রায় 2000 ° সে ।
(iii) এখানে পৃথিবীর মাধ্যাকর্ষণ শক্তির প্রভাব প্রায় নেই বললেই চলে ।
(iv) এই স্তরে স্থায়ী তড়িৎচুম্বকীয় ক্ষেত্রের অস্তিত্ব পাওয়া যায় , যার প্রভাবে ইলেকট্রন ও মুক্ত আয়নগুলি সংঘবদ্ধ অবস্থায় থাকে ।
(v) এই স্তরের পর বায়ুমণ্ডল মহাশূন্যে লীন হয় ।