উত্তর : উনিশ শতকে ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় চেতনার জাগরণ এক তাৎপর্যপূর্ণ অধ্যায় । বলাই বাহুল্য যে, ভারতবাসী এর প্রথম পাঠ পেয়েছিল পশ্চিমি সভ্যতা থেকে ।
( i ) পাশ্চাত্য দর্শন : উনিশ শতকে পাশ্চাত্য শিক্ষার হাত ধরে ভারতীয়দের মধ্যে বৌদ্ধিক বিকাশ ঘটে । ভারতবাসী পাশ্চাত্যের যুক্তিবাদ , উদারতন্ত্র ও জাতীয়তাবাদ সম্পর্কে সম্যক জ্ঞানলাভ করে । ফলে ব্রিটিশ সরকারের বঞ্চনা, শোষণ ও বৈষম্যমূলক নীতি সম্পর্কে দেশবাসীর চোখ খুলে যায় ।
( ii ) ফরাসি বিপ্লব : ইউরোপের বিভিন্ন দেশে সংগঠিত গণজাগরণ তথা বিপ্লব দেশবাসীকে বহুলাংশে জাতীয়তাবোধের অ আদর্শে উদ্দীপ্ত করে - ( a ) ফরাসি বিপ্লব ও তৎপ্রসূত জাতীয়তাবাদ এবং স্বাধীনতার মন্ত্র ভারতবাসীকে উৎসাহ জোগায় । (b ) ফ্রান্সে সংঘটিত জুলাই বিপ্লব ও ফেব্রুয়ারি বিপ্লবপ্রসূত উদারনৈতিক গণতন্ত্র ভারতবাসীকে উদ্বুদ্ধ করে ।
( iii ) ইটালির ঐক্য আন্দোলন : ইটালি ও জার্মানির ঐক্য আন্দোলন ভারতবাসীদের ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে উৎসাহিত করে । ম্যাৎসিনি , ক্যাভুর ,গ্যারিবন্ডি ও বিসমার্কের নেতৃত্ব ও আত্মত্যাগ ছিল ভারতবাসীর কাছে অনুপ্রেরণা । তাই ইটালির কার্বোনারি ও ইয়ং ইটালির অনুকরণে বাংলায় ১৯০২ খ্রিস্টাব্দে গড়ে উঠেছিল অনুশীলন সমিতি ।
( iv ) রুশ বিপ্লব : ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দের রুশ বিপ্লব দেশবাসীকে দারুণভাবে উজ্জীবিত করে । ভারতীয়রা বিশ্বাস করতে শুরু করে যে , তারাও রুশ জনগণের মতো বিপ্লব ঘটিয়ে এদেশ থেকে ব্রিটিশ শাসনের অবসান ঘটাতে পারবে ।
মন্তব্য : কিন্তু মনে রাখতে হবে যে, ভারতীয়দের মধ্যে জাতীয় চেতনা জাগরণ ঘটেছিল পাশ্চাত্য শিক্ষার হাত ধরেই । এদেশে পাশ্চাত্য শিক্ষার প্রসার না -হলে ভারতবাসীর জাতীয় চেতনা তথা জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের গতি যে রুদ্ধ হত তা বলাই বাহুল্য ।