উত্তর : কোম্পানি শাসনাধীন ভারতবর্ষে ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনগুলির মধ্যে সর্বাপেক্ষা উল্লেখযোগ্য ছিল সিপাহি বিদ্রোহ । নানা কারণে এই বিদ্রোহ সংঘটিত হলেও এর অন্যতম কারণ ছিল অর্থনৈতিক ।
( i ) ঔপনিবেশিক অর্থনীতি : ১৭৬৫ খ্রিস্টাব্দে দেওয়ানি লাভের পর ইংরেজ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি সুবা- বাংলায় ঔপনিবেশিক অর্থনীতি প্রয়োগ করে ।পরে যা গোটা ভারতবর্ষকে গ্রাস করে । ফলে –
( a ) এদেশের কুটিরশিল্প ধ্বংস হয় । কুটির শিল্পীসহ বহু মানুষের রুজি -রোজগার বন্ধ হয়ে যায় ।
( b ) এদেশে কোম্পানি ও তার বণিকরা একচেটিয়া বাণিজ্য শুরু করে । ফলে দেশি পণ্য ও দেশীয় বণিকরা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
( ii ) ভূমিরাজস্ব বৃদ্ধি : দেওয়ানি লাভের পর লর্ড ক্লাইভ সুবা বাংলায় দ্বৈতশাসন ব্যবস্থা চালু করে । এই ব্যবস্থায় চাষিদের ওপর দ্বিগুণ পরিমাণ ভূমি রাজস্বের বোঝা চাপানো হয় । চিরস্থায়ী , রায়তওয়ারি , তালুকদারি , ভাইয়াচারি বন্দোবস্ত চাষিদের অস্তিত্বকে বিপন্ন করে তোলে ।
( iii ) সম্পদ নিষ্কাশন : পলাশির যুদ্ধের পরবর্তী একশো বছর কোম্পানি ভারতের অর্থ ও সম্পদ জলের মতো ইংল্যান্ডে পাচার করে । কোম্পানি ও তার বণিকরা একচেটিয়া বাণিজ্য করে যে মুনাফা লাভ করত তা সবটাই বিলেতে পাঠিয়ে দিত । এইভাবে ভারতের অর্থনীতি রক্তশূন্য হয়ে পড়ে ।
( iv ) অন্যান্য কারণ : নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে এদেশের চাষিরা আর্থিক ক্ষতির শিকার হয় । ডালহৌসির সাম্রাজ্যবাদ নীতির দরুন দেশীয় রাজ্য ব্রিটিশ সাম্রাজ্যভুক্ত হয় । ফলে বহু মানুষের কর্মসংস্থান নষ্ট হয় । আবার ইনাম কমিশনের দৌলতে অনেক মৌলবি পরিবারের জমি হাতছাড়া হয় ।
উপসংহার : এইভাবে কোম্পানির শোষণমূলক অর্থনীতির দরুন দেশের সর্বস্তরের মানুষের জীবনে অন্ধকার নেমে আসে । দারিদ্র্য ও দুর্ভিক্ষ ছিল কোম্পানির সময়কালের পরিচিত চালচিত্র । তাই মানুষ এই হতাশার জ্বালা জুড়ানোর জন্য ১৮৫৭ খ্রিস্টাব্দের বিদ্রোহে শামিল হয় ।