নদীর কাজ কয় প্রকার ও কী কী ? প্রত্যেক প্রকার কাজের বিবরণ দাও ।

মাধ্যমিক দশম টেন ভূগোল madhyamik class 10 x geography questions answers প্রশ্নোত্তর নদীর কাজ কয় প্রকার ও কী কী  প্রত্যেক প্রকার কাজের বিবরণ দাও nodir kaj koiprokar o ki ki prottek kajer biborno dao


উত্তর : নদী উৎস থেকে মোহানা পর্যন্ত তার দীর্ঘ গতিপথে বিভিন্ন ধরনের কাজ করে । নদী তার প্রবাহপথে প্রধানত তিনধরনের কাজ করে , যথা — ক্ষয়,বহন ও অবক্ষেপণ । নদীর জলের আয়তন ও পরিমাণ ,গতিপথের ঢাল , জলপ্রবাহের গতি এবং বাহিত বস্তুভারের ওপর নদীর শক্তি নির্ভর করে । এই বিষয়গুলি নদীর কাজের ওপর প্রভাব বিস্তার করে ।


(১) ক্ষয় : পার্বত্য অঞ্চলের ভূমির ঢাল বেশি এবং ভূমিরূপ খুব বন্ধুর প্রকৃতির হওয়ায় নদীর জলস্রোতের বেগ খুব প্রবল হয় । নদী প্রস্তরখণ্ডকে ক্ষয় করে চূর্ণবিচূর্ণএবং স্থানচ্যুত করে নিজের চলার পথ দীর্ঘায়িত করে । একেই নদীর ক্ষয় কাজ বলে । নদীর ক্ষয়কাজ সাধারণত দু-ধরনের হয়, যথা — নিম্নক্ষয় ও পার্শ্বক্ষয় । এই ক্ষয় আবার বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় সংঘটিত হয় । 


জলপ্রবাহের দ্বারা ক্ষয় : প্রবহমান নদীর জলস্রোতের প্রভাবে নদীর খাত ও পার্শ্বে অবস্থিত অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও অসংলগ্ন প্রস্তরখণ্ডগুলি ভেঙে চূর্ণবিচূর্ণ হয় । 

অবঘর্ষ : নদীবাহিত প্রস্তরখণ্ডের সঙ্গে নদীগর্ভের সংঘর্ষের ফলে নদীখাতে নিম্ন ও পার্শ্ব উভয় প্রকার ক্ষয় হয় । 

ঘর্ষণজনিত ক্ষয় : নদীবাহিত অপেক্ষাকৃত বৃহদাকৃতির প্রস্তর খণ্ড গুলির মধ্যে পারস্পরিক সংঘাতের ফলে ভেঙে গিয়ে ক্ষুদ্রাকার কণায় পরিণত হয় এবং ক্রমে নুড়ি ও ক্ষুদ্র দানার পলিতে পরিণত হয় । 

দ্রবণজনিত ক্ষয় : কোনো নদী যদি চুনাপাথর বা অন্য কোনো সহজ দ্রাব্য খনিজসমৃদ্ধ শিলা বহন করে , তবে তা সহজেই দ্রবণে পরিণত হয় । 


(২) বহন : নদীর ক্ষয়কার্যের ফলে যেসব ক্ষয়প্রাপ্ত পদার্থ অর্থাৎ প্রস্তরখণ্ড , নুড়ি, বালি , কাদা ইত্যাদি নদী জলস্রোতের দ্বারা একস্থান থেকে অন্যস্থানে স্থানান্তরিত হয় , তাকে নদীর বহন কাজ বলে । বহন ক্ষমতা তিনটি প্রধান কারণের ওপর নির্ভর করে । যথা — ক্ষয়প্রাপ্ত কণার আকৃতি , ঘূর্ণন গতি এবং স্রোতের গতিবেগের ওপর । এই প্রক্রিয়া চার ভাগে সংঘটিত হয় । যথা— 


দ্রবণ প্রক্রিয়া : এই প্রক্রিয়ায় জলে দ্রবীভূত বিভিন্ন খনিজ পদার্থের কার্বনেট , সালফেট , ক্লোরাইড , অক্সাইড ইত্যাদির দ্রবণকে নদী বহন করে নিয়ে যায় । 

আকর্ষণ প্রক্রিয়া : অপেক্ষাকৃত বৃহৎ দানার বালি বা নুড়ি, পাথর স্রোতের আকর্ষণ প্রক্রিয়ার দ্বারা নদীখাত বরাবর গড়িয়ে চলে । 


লম্ফদান প্রক্রিয়া : মাঝারি আকৃতির শিলাকণা নদীতে ভাসতে পারে না বলে সেগুলি নদীগর্ভে লাফিয়ে লাফিয়ে এগিয়ে যায় । এগুলি নদীখাতে 30-120 সেমি পর্যন্ত লাফ দেয় । 

ভাসমান প্রক্রিয়া : শিলা ও প্রস্তরখণ্ডসমূহ ক্ষুদ্রাকার কণায় পরিণত হয়ে জলের ঘূর্ণিস্রোতে ভাসতে থাকে এবং দূরে বাহিত হয় । ঘূর্ণিস্রোতের প্রাবল্য কমে গেলে প্রথমেই ভারী কণাগুলি ভাসতে পারে না এবং ওই স্থানে সঞ্চিত হয় । কিন্তু সূক্ষ্ম কণাগুলি অর্থাৎ কাদা , পলি , বালি ইত্যাদি ভাসমান বোঝা হিসেবে বহুদূরে বাহিত হয় । 


(৩) অবক্ষেপণ : (i) নদীর গতিবেগ হ্রাস, (ii)গতিপথের ঢাল হ্রাস, ( iii )বস্তুভারের পরিমাণ বৃদ্ধি প্রভৃতি কারণে নদীর বহন ক্ষমতা হ্রাস পায় । ফলে নদীর বস্তুভার বা অতিরিক্ত বোঝা নদীর তলদেশে কিংবা উপত্যকার বিভিন্ন অংশে সঞ্চিত হয় , একে নদীর অবক্ষেপণ বলে ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন