নারীমুক্তি আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের অবদান মূল্যায়ন করো ।

মাধ্যমিক দশম টেন ইতিহাস madhyamik class 10 x history questions answers প্রশ্নোত্তর নারীমুক্তি আন্দোলনে বিদ্যাসাগরের অবদান মূল্যায়ন করো narimukti andolone biddashagorer obodan mullayon koro


উত্তর : উনিশ শতকে বাংলায় নারীমুক্তি আন্দোলনের ইতিহাসে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর ছিলেন এক উজ্জ্বল জ্যোতিষ্ক । নারীজাতির মুক্তির জন্য তিনি আজীবন লড়াই করেন । 


( i ) বিধবাবিবাহের পক্ষে : উনিশ শতকে বাংলাদেশে হিন্দু বিধবাদের অবস্থা ছিল করুণ । স্বামীর মৃত্যুর পর তাদের জীবন হয়ে উঠত দুর্বিষহ । সমাজে তারা ছিল অবহেলিত ও নির্যাতিতা । হিন্দু বিধবা নারীদের দুর্দশা তাঁকে ব্যাথিত করে । এদের মুক্তি তথা পুনরায় বিবাহ দেওয়ার জন্য তিনি প্রস্তুতি নেন । শুরু করেন শাস্ত্র অধ্যয়ন । বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ অধ্যয়ন করে তিনি প্রমাণ করেন যে ,বিধবাবিবাহ শাস্ত্রসম্মত । বিধবাবিবাহের পক্ষে তিনি জনমত গঠন শুরু করেন । এজন্য ব্রিটিশ সরকারের কাছে সওয়াল করেন ।সরকার সেই প্রস্তাব গ্রহণ করে । শেষপর্যন্ত ১৮৫৬ খ্রিস্টাব্দে ভারতের বড়োলাট লর্ড ডালহৌসি ‘ পঞ্চদশ বিধি ’আরোপ করে হিন্দু সমাজে বিধবাবিবাহ প্রথা আইনসিদ্ধ করেন । বিদ্যাসাগর নিজের পুত্রের সঙ্গে এক অষ্টাদশী বিধবার বিবাহ দেন । জানা যায় তিনি এরূপ ৬০ টি বিধবার পুনর্বিবাহ দেন । 


( ii ) বহুবিবাহের বিরুদ্ধে : সে যুগে হিন্দু কুলীন ব্রাহ্মণরা বহুবিবাহ করতে পারত । তাতে নারীজাতির কষ্টের শেষ ছিল না । বিদ্যাসাগর এই ঘৃণ্য প্রথার বিরুদ্ধে সরব হন এবং এর বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেন । তিনি বহুবিবাহ রহিত হওয়া উচিত কি না এতদ্বিষয়ক বিচার সংক্রান্ত একটি পুস্তিকা লেখেন । পুরুষের বহুবিবাহ বন্ধ করার জন্য তিনি সরকারের দ্বারস্থ হন । কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারি অনুমোদন মেলেনি । 

( iii ) বাল্য বিবাহের বিরুদ্ধে : সে যুগে হিন্দু সমাজে বাল্যবিবাহের ব্যাপক চলন ছিল । এই বস্তাপচা সামাজিক নিয়মের বিরুদ্ধে বিদ্যাসাগর সরব হন । এর জন্য শুরু করেন নিরলস সংগ্রাম । তিনি সর্বশুভকরী পত্রিকায় বাল্য বিবাহের দোষ শীর্ষক নিবন্ধে বাল্যবিবাহের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেন । এ ব্যাপারে তিনি সফলও হন । ১৮৬০ খ্রিস্টাব্দে সরকার আইন করে মেয়েদের বিবাহের বয়স কমপক্ষে ১০ বছর ধার্য করে । 

( iv ) স্ত্রীশিক্ষার প্রসার : বিদ্যাসাগর অনুধাবন করেন যে , নারী সমাজকে হিন্দু সমাজের নিষ্পেষণ থেকে মুক্ত করতে গেলে তাদের শিক্ষার আলোকে আলোকিত করতে হবে । তা না - হলে তাদের মুক্তির উপায় নেই । এজন্য স্ত্রীশিক্ষা প্রসারের জন্য তিনি ইতিবাচক উদ্যোগ গ্রহণ করেন । তিনি নিজের খরচায় বাংলাদেশে ৩৫ টি বালিকা বিদ্যালয় স্থাপন করেন । এ ছাড়া প্রতিষ্ঠা করেন স্ত্রীশিক্ষা সম্মিলনী , হিন্দু ফিমেল স্কুল প্রভৃতি । ১৮৪৯ খ্রিস্টাব্দে নেটিভ ফিমেল স্কুল স্থাপনের ক্ষেত্রে তিনি বেথুন সাহেবকে সর্বতোভাবে সাহায্য করেন । শিক্ষাকে সহজ তথা জনমুখী করে তোলার জন্য তিনি অনেকগুলি অনুবাদ সাহিত্য রচনা করেন । এ ছাড়া বর্ণপরিচয় ,কথামালা ,বোধোদয় ইত্যাদি পুস্তক লেখেন । 

মূল্যায়ন : এইভাবে ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের ঐকান্তিক প্রচেষ্টা ও নিরলস পরিশ্রমে বাংলার অবহেলিত ও নিপীড়িত নারীসমাজ পেয়েছিল মুক্তির স্বাদ । তাঁর মোক্ষম আঘাতে বাংলার হিন্দু সমাজে ফিরেছিল প্রাণের স্পন্দন । সর্বক্ষেত্রেই যে তিনি সফল হয়েছিলেন তা নয়, তবে তিনি যে - যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছিলেন তা বলাই বাহুল্য । 





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন