হুতোম প্যাঁচার নকশা সম্বন্ধে যা জানো লেখো ।

মাধ্যমিক দশম টেন ইতিহাস madhyamik class 10 x history questions answers প্রশ্নোত্তর হুতোম প্যাঁচার নকশা সম্বন্ধে যা জানো লেখো hutom panchar nokosha sombondhe ja jano lekho

উত্তর : উনিশ শতকের বাংলা সাহিত্যের ইতিহাসের একটি অমূল্য গ্রন্থ হল হুতোম প্যাঁচার নকশা । এটির রচয়িতা হলেন উনিশ শতকের বাংলা চলিত গদ্যরীতির প্রবর্তক কালীপ্রসন্ন সিংহ । তিনি হুতোম প্যাঁচা ছদ্মনামে এই নকশা জাতীয় গ্রন্থ রচনা করেন । 



( i ) প্রকাশকাল : এটির প্রথমভাগ প্রকাশিত হয়েছিল ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে । আর গ্রন্থটি সম্পূর্ণরূপে প্রকাশিত হয় ১৮৬৮ খ্রিস্টাব্দে । ১৪০ গ্রন্থটিতে তৎকালীন সামাজিক অবস্থার প্রতিফলন ঘটেছিল । 


 

( ii ) গ্রন্থটির বিষয় : উনিশ শতকের মধ্যভাগের কলকাতার নাগরিক জীবনের নানান উশৃঙ্খলতার চিত্র এখানে লিপিবদ্ধ হয়েছিল । এ ছাড়া কলকাতার বিভিন্ন উৎসব , পালাপার্বণ ও বারোয়ারি পুজোর বর্ণনা আছে । আবার মাহেশের রথযাত্রার বিবরণও এটিতে পাওয়া যায় । এই নকশা সাহিত্যে কলকাতার বিত্তবান দেশীয় সমাজের স্বার্থপর রূপটি তুলে ধরা হয়েছে । বলা হয়েছে যে , এই বিত্তবান দেশীয় সমাজ ‘সাপ হতেও ভয়ানক , বাঘের চেয়ে হিংস্র’ । এরা নিজেদের স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে যে-কোনো হীন কাজ করতে পিছপা হয় না বলে উল্লেখ করা হয়েছে । এই নকশা সাহিত্যে ভণ্ডামি , কপটতা ও হীনতার কথা তীক্ষ্ণ, শ্লেষাত্মক ভাষায় ব্যক্ত করা হয়েছে । হুতোম প্যাঁচা তাঁর এই রচনায় কলকাতার বিত্তশালী ব্যক্তিদের তীব্রভাবে বিদ্রুপ করে দেশের ও দশের উন্নতি তথা মঙ্গল কামনা করেছেন । 


( iii ) নকশা শব্দের অর্থ : ‘নকশা’ বলতে বোঝায় রেখাচিত্র । লেখক এই গ্রন্থে নকশা বলতে ব্যঙ্গধর্মী রেখাচিত্রকে বুঝিয়েছেন । এটি গদ্য আকারে পরিবেশিত হয়েছে 


( iv ) রচনাশৈলীর বৈশিষ্ট্য : রামমোহন রায় বা বিদ্যাসাগর প্রমুখ গুরুগম্ভীর ভাষায় গদ্যসাহিত্য রচনায় ব্রতী হয়েছিলেন । কিন্তু কালীপ্রসন্ন সিংহ সর্বজনবোধ্য চলিত ভাষাতে গ্রন্থটি রচনা করেছিলেন । গ্রন্থটিতে ব্যঙ্গের পাশাপাশি রঙ্গরসের  আধিক্যও ছিল । 



( v ) গ্রন্থের রচনাকার নিয়ে বিতর্ক : গ্রন্থটির রচনাকার নিয়ে বিতর্ক ছিল । কালীপ্রসন্ন সিংহের ছদ্মনাম হুতোম প্যাঁচা ছিল বলে বেশিরভাগ পণ্ডিত মনে করেন । আবার ভূদেব মুখোপাধ্যায়ের ছদ্মনাম হুতোম ছিল বলে অনেকে মনে করেন । মহেন্দ্রলাল বিদ্যানিধি মনে করেন গ্রন্থটি কালীপ্রসন্ন সিংহের লেখা । এটি বাংলা সাহিত্যের প্রথম সামাজিক ব্যঙ্গ নকশা । সম্পূর্ণ চলিতভাষায় লেখা এই গ্রন্থটিতে কলকাতার কথ্য ভাষাকেই অবিকৃতরূপে তুলে ধরা হয়েছে । ব্যঙ্গের মধ্যদিয়ে বলিষ্ঠ মতামতের প্রকাশ দেখা যায় গ্রন্থটিতে । 



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন