মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল সংক্ষেপে লেখো ।

মাধ্যমিক দশম টেন ইতিহাস madhyamik class 10 x history questions answers প্রশ্নোত্তর মুন্ডা বিদ্রোহের কারণ ও ফলাফল সংক্ষেপে লেখো munda bidroher karon o folafol songkhepe lekho


উত্তর : ব্রিটিশ শাসনাধীন ভারতে উপজাতি বিদ্রোহগুলির মধ্যে অন্যতম ছিল ১৮৯৯-১৯০০ খ্রিস্টাব্দে সংঘটিত মুন্ডা বিদ্রোহ । এই বিদ্রোহে নেতৃত্ব দেন বিরসা মুন্ডা । এই উপজাতি বিদ্রোহের কেন্দ্রস্থল ছিল বিহারের রাঁচি ও সিংভূম অঞ্চল । 
 
( a ) প্রতারণা : মুন্ডা বিদ্রোহের পশ্চাতে প্রধান কারণ ছিল অর্থনৈতিক । দ্য ডাস্ট স্টম অ্যান্ড দ্য হ্যাঙ্গিং মিস্ট নামক গ্রন্থে গবেষক সুরেশ সিং এই অর্থনৈতিক দিকটি তুলে ধরেছেন । যেখানে দেখানো হয়েছে ইংরেজ প্রশাসন , জমিদার ও বহিরাগত বা দিকুদের কাছে মুন্ডা কৃষকেরা দীর্ঘদিন ধরে শোষিত ও অত্যাচারিত হয় । এই শোষণের ক্ষোভ থেকেই মুন্ডারা বিদ্রোহে শামিল হয় । 

( b ) খুৎকাঠি প্রথার উচ্ছেদ : মুন্ডারা গভীর জঙ্গল পরিষ্কার করে তাদের বসতি ও কৃষিজমি তৈরি করেছিল । এজন্য এদের খুৎকাঠিদার বলা হত । তারা যৌথভাবে জমি চাষ করত এবং জমির স্বত্ব ভোগ করত । কিন্তু জমিদারি ব্যবস্থায় সেখানকার সেই প্রথার অবসান হয় । ফলে মুন্ডারা ইংরেজ কোম্পানির প্রতি ক্ষুব্ধ হয় । 

( c ) সরকারি বঞ্চনা : সরকারি প্রশাসন সবসময় জমিদার তথা শোষিত শ্রেণির পক্ষে কথা বলত । প্রতারিত মুন্ডারা আইন আদালতের সাহায্য নিলেও তারা সুবিচার পেত না । 

( d ) বেঠবেগারি প্রথা : হতদরিদ্র ও অশিক্ষিত মুন্ডারা নানাভাবে শোষণের শিকার হত । একদিকে মহাজনি শোষণ , জমিদারের মাত্রাতিরিক্ত খাজনা আদায় অন্যদিকে মহাজনের জমিতে বেগার বা বিনা মজুরিতে শ্রম দিতে হত । তার ওপর মুন্ডারা যখন তখন ভূমি হারানোর ভয়ে আড়ষ্ট থাকত । 

( e ) মর্যাদাহীনতা : মুন্ডা সমাজব্যবস্থায় ‘মুন্ডা’ বা প্রধানরা বিশেষ মর্যাদার অধিকারী ছিলেন ।কিন্তু জমিদার , জোতদার , মহাজন ও ইংরেজরা তাদের। সম্মান করত না । নারীরাও সম্মান পেত না । এর ফলে তারা বিক্ষুব্ধ হয় । 

( e )  চা -শিল্পে নিয়োগ : দরিদ্র মুন্ডাদের , প্রলোভন দেখিয়ে আসামের চা - বাগানে নিয়ে যাওয়া হত । কিন্তু সেখানে তাদের উপযুক্ত পারিশ্রমিক দেওয়া হত না । বরং কপালে জুটত লাঞ্ছনা - বঞ্চনা । 

( g ) ধর্মীয় হতাশা : মুন্ডা সম্প্রদায়ের অনেকেই খ্রিস্টানধর্ম গ্রহণ করে । তারা ভেবেছিল হয়তো এভাবে তাদের দুঃখদুর্দশার অবসান হবে । কিন্তু তা হয়নি । এসব কারণে তাদের জীবনে হতাশা নেমে আসে । 


[          ] বিদ্রোহের সূচনা : এইভাবে উনিশ শতকের শেষে মুন্ডাদের ভাগ্যাকাশে আবির্ভূত হন বিরসা মুন্ডা নামে এক নেতা । তিনি মুন্ডাদের মহাজন , জমিদার ও ইংরেজ প্রশাসনের বিরুদ্ধে সংগঠিত করেন এবং স্বাধীন মুন্ডা রাজ্য প্রতিষ্ঠার কথা ঘোষণা করেন । এইভাবে ‘উলগুলান ’ বা মুন্ডা বিদ্রোহের সূচনা হয় । 



[          ] বিদ্রোহের ফলাফল : আপাতদৃষ্টিতে এই বিদ্রোহ ব্যর্থ হলেও এর ফলাফল ছিল সুদূরপ্রসারী । 

( a ) ব্যর্থতা : কঠোর দমন নীতির কাছে শেষ পর্যন্ত মুন্ডাবিদ্রোহ ব্যর্থ হয় । বিদ্রোহের নেতা বিরসা মুন্ডাকে গ্রেফতার করে জেলে পাঠানো হয় । সেখানেই তিনি মারা যান ( ১৯০০ খ্রিস্টাব্দ ) বহু বিদ্রোহীকে ফাঁসি দেওয়া হয় এবং অনেকের কারাবাস হয় । 


( b ) বেঠবেগারির অবসান : ব্রিটিশ সরকার ১৯০৮ খ্রিস্টাব্দে ছোটোনাগপুর প্রজাস্বত্ব আইন দ্বারা বেঠবেগারি প্রথার অবসান ঘটায় । 


( c ) জমি জরিপের ব্যবস্থা : সরকার ১৯০২-১৯১০ খ্রিস্টাব্দের মধ্যে মুন্ডাদের পারিবারিক জমি জরিপের ব্যবস্থা করে । ফলে তাদের জমির সীমানা নির্দিষ্ট হয় । 

( d ) তানা ভগৎ আন্দোলন : এই বিদ্রোহের সূত্র ধরে ছোটোনাগপুর অঞ্চলের হো আদিবাসীরা তানা ভগৎ আন্দোলনের সূচনা করে । তারা ঘোষণা করে যে , তারা তাদের জমির জন্য সরকারকে কোনো রাজস্ব দেবে না । 

( f ) বিরসা সম্প্রদায়ের উদ্ভব : মুন্ডা বিদ্রোহের মধ্যদিয়ে মুন্ডা সমাজে বিরসা সম্প্রদায় নামে একটি নতুন সম্প্রদায় গড়ে ওঠে । তারা বিরসাকে ভগবানরূপে পুজো করতে শুরু করে । 




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন