উত্তর : উনিশ শতকে বাংলায় ফরাজি আন্দোলনের সূচনা করেন হাজি শরিয়তউল্লাহ । তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র মহসীন ওরফে দুদু মিয়াঁ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব দেন ।
( i ) উদ্দেশ্য : ফরাজি আন্দোলনের মূল উদ্দেশ্য ছিল – ( a ) ইসলাম ধর্মের সংস্কার এবং সকল মুসলমানকে কোরান নির্দেশিত ৫ টি অনুশাসনে অনুপ্রাণিত করা ।
( b ) বিধর্মী বিদেশি ইংরেজরা ছিল তাদের এবং ইসলামের শত্রু । সুতরাং , তারা মনে করত প্রত্যেক মুসলমানের প্রধান কর্তব্য হল এদেশ থেকে বিধর্মী ইংরেজদের বিতাড়ন করা ।
( c ) সমাজের সমস্ত শ্রেণির মঙ্গলসাধন করাই ছিল তাঁর আদর্শ ।
( ii ) নেতৃত্ব : ফরাজি আন্দোলনকারীরা পূর্ববঙ্গে হিন্দু জমিদার ও নীলকর সাহেবদের বিরুদ্ধে সংঘবদ্ধ হয় । সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার জন্য দুদু মিয়াঁ পঞ্চায়েত প্রথা পুনরুজ্জীবিত করেন । তিনি পূর্ববঙ্গে তিনশো থেকে পাঁচশো পরিবার নিয়ে কতকগুলি হল্কা বা অঞ্চলে বিভক্ত করেন । তিনি একটি শক্তিশালী লেঠেল বাহিনী ও গুপ্তচর বাহিনী গড়ে তোলেন ।
( iii ) ব্যর্থতা : ১৮৬২ খ্রিস্টাব্দে তিনি পরলোকগমন করেন । তাঁর মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র নোয়া মিয়াঁ এই আন্দোলনের নেতৃত্ব গ্রহণ করলেও তাঁর সাম্প্রদায়িক মনোভাব ও যোগ্য নেতৃত্বের অভাবের ফলে ফরাজি আন্দোলন ব্যর্থ হয় ।
মূল্যায়ন : মূলত ধর্মীয় আন্দোলনরূপে ফরাজি আন্দোলন শুরু হলেও পরে তা ( a ) আর্থসামাজিক আন্দোলনে পরিণত হয় । ( b ) ইংরেজ , হিন্দু জমিদার ও নীলকরদের শোষণের বিরুদ্ধে সরব হয়ে এই আন্দোলন এক গণ আন্দোলনে পরিণত হয় । ( c ) এই আন্দোলন প্রমাণ করেছিল যে সামাজিক ন্যায় প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ধর্ম কোনো বাধা হয় না ।