জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তির ধাপগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ ।

মাধ্যমিক দশম টেন জীবন বিজ্ঞান madhyamik class 10 x life Sciences questions answers প্রশ্নোত্তর জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তির ধাপগুলির সংক্ষিপ্ত বিবরণ jiboner rasayanik uttpottir dhapgulir songkhipto biboron


উত্তর : জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তি : প্রাচীন পৃথিবীর পরিবেশে উপস্থিত বিভিন্ন অজৈব রাসায়নিক উপাদান ( মৌল ও যৌগ ) থেকে জীবদেহের পক্ষে গুরুত্বপূর্ণ জৈব যৌগ সৃষ্টির ধারাবাহিক রাসায়নিক বিক্রিয়াগুলিকে জীবনের রাসায়নিক উৎপত্তি বা কেমােজেনি বলে । বিজ্ঞানী হ্যালডেন ও ওপারিন কেমােজেনির প্রধান ধাপগুলি বর্ণনা করেন । এগুলি হল— ( ১ ) সরল জৈব যৌগের উৎপত্তি : পৃথিবীর উৎপত্তিকালীন তাপমাত্রা ক্রমশ কমে 1000°C হওয়ার পর বিভিন্নপ্রকার হাইড্রোকার্বন সৃষ্টি হয় । যেমন — অ্যাসিটিলিন , ইথিলিন প্রভৃতি । এগুলি আবার উত্তপ্ত বাম্পের সঙ্গে বিক্রিয়া করে অক্সি- ও হাইড্রক্সি-যৌগ উৎপন্ন করে । যেমন — অ্যাসিটালডিহাইড । এই যৌগগুলি আবার C ,H , 0 প্রভৃতি মৌল এবং অন্যান্য যৌগের সাথে বিক্রিয়া করে সরল জৈব যৌগ , যেমন — সরল শর্করা, অ্যামিনাে অ্যাসিড , ফ্যাটি অ্যাসিড , পিউরিন , পিরিমিডিন ইত্যাদি তৈরি করে । 


( ২ ) জটিল জৈব যৌগের উৎপত্তি : সরল জৈব যৌগগুলি বিভিন্ন বিক্রিয়া দ্বারা নানা জটিল জৈব যৌগ ( যেমন — জটিল কার্বোহাইড্রেট , প্রােটিন , ফ্যাটও নিউক্লিক অ্যাসিড ইত্যাদি ) সৃষ্টি করে । এই জটিল বিক্রিয়াগুলিতে প্রয়ােজনীয় শক্তির জোগান দিয়েছিল সৌরশক্তি ও বজ্রপাত । প্রাচীন পৃথিবীতে প্রাণ উৎপত্তির পূর্বে , প্রথম প্রাণকণা সৃষ্টির জন্য প্রয়ােজনীয় বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদানগুলি সমুদ্রের উত্তপ্ত জলে অবস্থান করত । হ্যালডেনের মতে এইসব জৈব যৌগগুলি সমুদ্রের জলে মিশে ‘হট ডাইলিউট স্যুপ বা তপ্ত লঘু স্যুপ’ নামক উত্তপ্ত তরল হিসেবে অবস্থান করত । এর অপর নাম প্রিবায়ােটিক স্যুপ । তার মতে প্রথম প্রাণের উৎপত্তি এখানেই  হয়েছিল । 


( ৩ ) কোয়াসারভেট -এর উৎপত্তি : উৎপন্ন বৃহৎ ও জটিল জৈব গুলি পরস্পর মিলিত হয়ে কোয়াসারভেট নামক কোলয়েড কণা সৃষ্টি করে । অর্থাৎ , প্রাচীন পৃথিবীতে তপ্ত লঘু স্যুপের মতাে সমুদ্রের মধ্যে সীমানা পদাবৃত জৈব যৌগপূর্ণ যে কোলয়েড বিন্দু বা কণা থেকে আদিকোশ বা প্রােটোসেল তৈরি হয়েছিল , তাকে কোয়াসারভেট বলে । এতে প্রােটিন, ফ্যাট, শর্করা, নিউক্লিক অ্যাসিড প্রভৃতি প্রাণ সৃষ্টির উপাদান ছিল । জীবন সৃষ্টির বিক্রিয়া এর মধ্যেই ঘটেছিল । প্রসঙ্গত উল্লেখ্য , আমেরিকান বিজ্ঞানী সিডনি ফক্স ( 1957 ) এর মতানুসারে , প্রাচীন পৃথিবীতে সমুদ্রের মধ্যে অনেকগুলি অ্যামিনাে অ্যাসিড যুক্ত হয়ে প্রথমে প্রােটিনয়েড এবং পরে মাইক্রোস্ফিয়ার তৈরি হয় । তার মতে কোয়াসারভেট নয় , মাইক্রোস্ফিয়ারেই প্রথম প্রাণের উৎপত্তি ঘটে ।  প্রাচীন পৃথিবীতে দ্বিলিপিড পর্দাবৃত, ATP ব্যবহারে সক্ষম , বৃদ্ধি ও বিভাজনক্ষম যে জৈব গঠন থেকে বিজ্ঞানী সিডনি ফক্স প্রথম প্রাণ সৃষ্টি হয়েছিল বলে বর্ণনা করেন , তাকে মাইক্রোস্ফিয়ার বলে । তিনি পরীক্ষাগারে অ্যামিনাে অ্যাসিডকে শুষ্ক করে প্রােটিনয়েড ও পরে তাকে জলে দ্রবীভূত করে মাইক্রোস্ফিয়ার সৃষ্টি করতে সমর্থ হন । 


( ৪ ) নগ্ন জিন বা নিউক্লিক অ্যাসিডের উৎপত্তি : মুক্ত নিউক্লিওটাইড গুলি একত্রে পলিনিউক্লিওটাইড গঠন করে ,যা থেকে নিউক্লিক অ্যাসিড সৃষ্টি হয় । বিজ্ঞানীদের মতে প্রথম সৃষ্ট এই নিউক্লিক অ্যাসিডগুলি RNA প্রকৃতির । একে নগ্নজিন বলে ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন