উত্তর : কোনো সুনির্দিষ্ট খাত বা উপত্যকা বরাবর মাধ্যাকর্ষণ বলের প্রভাবে খুব ধীরে চলনশীল সুবৃহৎ বরফের স্তূপ হল হিমবাহ । ভূবিজ্ঞানী ফ্রিন্টের মতে , “হিমবাহ হল এক বিশালাকার বরফের স্তূপ যা প্রধানত তুষার জমে সৃষ্টি হয়ে বিস্তীর্ণ অঞ্চল জুড়ে অবস্থান করছে এবং এটি বর্তমানে গতিশীল অবস্থায় রয়েছে বা অতীতে এক সময়গতিশীল ছিল ।”
হিমবাহের শ্রেণিবিভাগ : হিমবাহের অবস্থান ও প্রকৃতির উপর নির্ভর করে বিজ্ঞানী অ্যালম্যান হিমবাহকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করেছেন ।
পার্বত্য বা উপত্যকা হিমবাহ : উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে হিমবাহ পর্বতের বিভিন্ন উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত বলে তাকে পার্বত্য হিমবাহ বা উপত্যকা হিমবাহ বলে ।
উদাহরণ : আলাস্কার হুবার্ড পৃথিবীর বৃহত্তম ( 115 × 10 বর্গকিমি ) উপত্যকা হিমবাহ ।
মহাদেশীয় হিমবাহ : উত্তর ও দক্ষিণমেরু অঞ্চলে ভূমিভাগের একটি বিশাল অঞ্চল জুড়ে যে হিমবাহ অবস্থান করতে দেখা যায়, তাকে মহাদেশীয় হিমবাহ বলে ।
উদাহরণ : অ্যান্টার্কটিকার ল্যাম্বার্ট পৃথিবীর বৃহত্তম মহাদেশীয় হিমবাহ ।
পর্বতের পাদদেশীয় বা পিডমন্ট হিমবাহ : হিমরেখার নীচে পর্বতের পাদদেশে একাধিক পার্বত্য হিমবাহ একত্রিত হয়ে যে বরফের স্তর সৃষ্টি করে ,তাকে পর্বতের পাদদেশীয় বা পিডমন্ট হিমবাহ বলে ।
উদাহরণ : আমেরিকা যুক্তরাষ্ট্রের মালাসপিনা পৃথিবীর বৃহত্তম পাদদেশীয় হিমবাহ ।
গ্রাবরেখা : উচ্চ পার্বত্য অঞ্চল থেকে ক্ষয়জাত নুড়ি, পাথর , শিলাখণ্ড প্রভৃতি হিমবাহ দ্বারা বাহিত হয়ে বিভিন্নভাবে সঞ্চিত হয়ে যে ভূমিরূপ সৃষ্টি করে তাকে গ্রাবরেখা বলে । অবস্থান ও প্রকৃতি অনুসারে গ্রাবরেখাকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায় । যথা— (i) পার্শ্ব গ্রাবরেখা (ii) মধ্য গ্রাবরেখা , ( iii ) প্রান্তগ্রাবরেখা (iv) আবদ্ধ গ্রাবরেখা ( v) তলদেশ গ্রাবরেখা প্রভৃতি ।
পার্শ্ব গ্রাবরেখা : হিমবাহের পার্শ্ববর্তী পাহাড়ের ঢাল থেকে আবহবিকারজাত পদার্থ , তুষারপাতজাত পদার্থ প্রভৃতি হিমবাহের দু - পাশে সঞ্জিত হয়ে পার্শ্ব গ্রাবরেখার সৃষ্টি করে ।
মধ্য গ্রাবরেখা : দুটি পার্শ্ব গ্রাবরেখা পরস্পর সংযুক্ত হয়ে মধ্য গ্রাবরেখা গঠন করে ।
প্রান্ত গ্রাবরেখা : হিমবাহের সম্মুখভাবে সঞ্জিত গ্রাবরেখাকে প্রান্ত গ্রাবরেখা বলে ।
আবদ্ধ গ্রাবরেখা : হিমবাহের ফাটলের মধ্য দিয়ে প্রস্তরখণ্ড অনেক সময় হিমবাহের মধ্যে আবদ্ধ হয়ে পড়ে । একে আবদ্ধ গ্রাবরেখা বলে ।
তলদেশ গ্রাবরেখা : প্রস্তরখণ্ড পর্বতগাত্র ও হিমবাহের ফাটলের তলদেশে পৌঁছোলে , তাকে তলদেশ গ্রাবরেখা বলে ।
উদাহরণ : তিস্তা নদীর উচ্চ অববাহিকায় লাচুং ও লাচেন নামক স্থানে বিভিন্ন প্রকার গ্রাবরেখা লক্ষ করা যায় ।