হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও ।

মাধ্যমিক দশম টেন ভূগোল madhyamik class 10 x geography questions answers প্রশ্নোত্তর হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে সৃষ্ট ভূমিরূপের বর্ণনা দাও himbaher kkhoykarjer fole srishto bhumiruper bornona dao

উত্তর : হিমবাহের ক্ষয়কার্য শুধুমাত্র উচ্চ পর্বতের ওপরই সীমাবদ্ধ থাকে এবং এই ক্ষয়কার্যের ফলে উচ্চ পার্বত্য অঞ্চলে বিভিন্ন প্রকার ভূমিরূপের সৃষ্টি হয় , নিম্নে তা আলোচনা করা হল — 

সার্ক বা করি : উচ্চ পার্বত্য এলাকায় হিমবাহের ক্ষয়কার্যের ফলে যে অবতল আকৃতির উপত্যকার সৃষ্টি হয় তা দেখতে অনেকটা আরামকেদারার মতো হয় । একে ফরাসি ভাষায় সার্ক এবং ইংরেজিতে করি বলে । বরফমুক্ত হলে এই ভূমিরূপ দৃশ্যমান হয় । এর তিনটি অংশ থাকে— ( a ) মস্তকের দিকে খাড়া প্রাচীর ( b ) মধ্যভাগে খাত বা বেসিন ( c ) প্রান্তদেশের চৌকাঠ বা করি ওষ্ঠ । 
 

অ্যারেট : পাশাপাশি প্রবাহিত দুটি হিমবাহের মধ্যে সংকীর্ণ ছুরির ফলার মতো তীক্ষ্ণ উচ্চভূমি বা বিভাজিকাকে অ্যারেট বা হিমশিরা বলে । এগুলি কখনো - কখনো করাতের দাঁতের মতো খাঁজকাটা হয়ে থাকে । 


পিরামিড চূড়া : একটি পর্বতের বিভিন্ন দিকে কয়েকটি হিমবাহ বা সার্ক সৃষ্টি হলে ,পর্বতশীর্ষটি পিরামিডের মতো খাড়া ও তীক্ষ্ণ অংশে পরিণত হয় , একে পিরামিড চূড়া বলে ।  
উদাহরণ : হিমালয় পর্বতের নীলকণ্ঠ শৃঙ্গ, নেপালের মাকালু এরূপ একটি পিরামিড চূড়া । 
 


কর্তিত শৈলশিরা : হিমবাহ পার্বত্য উপত্যকার মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হওয়ার সময় উপত্যকার উভয় পার্শ্বস্থ স্পার বা পর্বতের অভিক্ষিপ্তাংশ সমূহের সম্মুখভাগগুলিকে কেটে দ্রোণী বা উপত্যকাকে আরও চওড়া ও সোজা করে দেয় । এরূপ কর্তিত স্পারগুলিকে কর্তিত শৈলশিরা বলে । এটি দেখতে ত্রিভুজাকার । এরূপ উপত্যকার মধ্য দিয়ে হিমবাহ প্রবাহিত হওয়ার ফলে উপত্যকার মধ্যভাগ খুব প্রশস্ত ও গভীর হয় এবং এর পার্শ্বদেশ খুবখাড়া হয়ে ‘U’ আকৃতির উপত্যকায় পরিণত হয় । 


হিমদ্রোণী বা U আকৃতির উপত্যকা : হিমবাহের ক্ষয়কার্যের মাধ্যমে অত্যন্ত প্রশস্ত মোটামুটি মসৃণ ও খাড়া ঢালের পার্শ্বদেশবিশিষ্ট ‘ U ’ আকৃতির হিমবাহ উপত্যকাকে ‘U ’ আকৃতির উপত্যকা বা হিমদ্রোণী বলে । 

উদাহরণ : হিমালয়ের রূপকুণ্ড হিমদ্রোণী ।


রসেমতানে : হিমবাহের প্রবাহপথে অবস্থিত কঠিন শিলাগঠিত ঢিপির প্রতিবাত ঢাল ঘর্ষণের মাধ্যমে মসৃণ হয় এবং অনুবাত ঢাল উৎপাটনের মাধ্যমে এবড়োখেবড়ো , খাঁজকাটা ও অমসৃণ হয় । এই প্রকার ভূমিরূপকে রসেমতানে বলে । 

উদাহরণ : কাশ্মীর উপত্যকার ঝিলাম নদীর উপনদী লিডার উপত্যকাতে রসেমতানে দেখতে পাওয়া যায় । 


ক্র্যাগ ও টেল : হিমবাহের প্রবাহপথে প্রথমে কঠিন শিলা ও পরে কোমল শিলা অবস্থান করলে কোমল শিলা সরাসরি ক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা পেয়ে কঠিন শিলার পিছনে লেজের মতো অবস্থান করে । এই ধরনের কঠিন শিলাযুক্ত অংশকে ক্র্যাগ এবং পিছনের ঢালযুক্ত কোমল শিলাস্তরকে টেল বলে ।  


ফিয়র্ড : ফিয়র্ড হল হিমবাহ কর্তিত উপত্যকা যা সমুদ্রের জল দ্বারা প্লাবিত হয়ে সমুদ্র তলে অবস্থান করে । এর প্রান্তভাগে চৌকাঠের মতো একটি অংশ উপস্থিত থাকে । ফিয়র্ড হল একটি দীর্ঘকায় অববাহিকা এবং এর ঊর্ধ্বাংশে বরফের গভীরতা বেশি থাকায় ক্ষয়ের পরিমাণও বেশি । 

উদাহরণ : নরওয়ের সোজনে ফিয়র্ড পৃথিবীর গভীরতম ফিয়র্ড ।





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন