উত্তর : ভূবিজ্ঞানী ব্যাগনল্ডের মতে , মরুভূমি অঞ্চলে বায়ুর গতিপথে কোনো প্রতিবন্ধক ছাড়া গড়ে ওঠা সচল বা গতিশীল বালির স্তূপকে বালিয়াড়ি বলে ।
শ্রেণিবিভাগ : বালিয়াড়িকে সাধারণত দুটিভাগে ভাগ করা যায় যথা — ( a ) আকৃতি ও গঠন অনুসারে ( b ) অবস্থান অনুসারে ।
( a ) আকৃতি ও গঠন অনুসারে বালিয়াড়ির শ্রেণিবিভাগ : ( i ) অনুদৈর্ঘ্য বা সিফ বালিয়াড়ি : যে সকল দীর্ঘ ও সংকীর্ণ বালিয়াড়ি বায়ুপ্রবাহের সমান্তরালে গঠিত হয় তাকে অনুদৈর্ঘ্য বা সিফ্ বালিয়াড়ি বলে । আরবি ভাষায় ‘সিফ’ কথার অর্থ সোজা তরবারি । সিফ বালিয়াড়ি 100-150 কিমি দীর্ঘ, 1 কিমির বেশি প্রশস্ত এবং উচ্চতা 100 মিটারের বেশি হয় । উদাহরণ — থর মরুভূমিতে সিফ বালিয়াড়ি দেখা যায় ।
( ii ) বার্খান : বায়ুর গতিপথের সঙ্গে লম্বভাবে অবস্থিত অপ্রতিসম অর্ধচন্দ্রাকৃতি বিশিষ্ট বালিয়াড়িকে বাৰ্খান বলে । এর সামনের দিক উত্তল এবং পিছনের দিক অবতল হয় । বার্খানের দুই প্রান্তে সিং- এর মতো দুটি শিরা দেখা যায় । এর উচ্চতা 10 -30 মিটার এবং প্রস্থ 40 -70 মিটার হয়ে থাকে ।
উদাহরণ : সাহারা মরুভূমিতে অসংখ্য বাৰ্খান দেখা যায় ।
( iii ) অনুপ্রস্থ বা তির্যক বালিয়াড়ি : বায়ুর গতিপথের সঙ্গে আড়াআড়িভাবে বা তির্যকভাবে গড়ে ওঠা বালিয়াড়িকে তির্যক বালিয়াড়ি বলে । এগুলি দেখতে অনেকটা সমুদ্রের ঢেউ - এর মতো ।
উদাহরণ : কালাহারি মরুভূমিতে তির্যক বালিয়াড়ি দেখা যায় ।
( iv ) অ্যাকলে বালিয়াড়ি : একাধিক বাৰ্খান পরস্পর যুক্ত হয়ে যে দীর্ঘ আঁকা বাঁকা সাপের দেহের মতো সারিবদ্ধভাবে এগিয়ে বা পিছিয়ে অবস্থান করে , একে অ্যাকলে বালিয়াড়ি বলে । এগিয়ে যাওয়া অ্যাকলে বালিয়াড়িকে লিংগুঅয়েড এবং পিছিয়ে যাওয়া অ্যাকলে বালিয়াড়িকে বাৰ্খানয়েড বলে ।
( v ) নক্ষত্র বালিয়াড়ি : মরুভূমি অঞ্চলে বিভিন্ন দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয় এবং সেই ক্ষেত্রে বালিয়াড়িগুলি একাধিক তলবিশিষ্ট হয় । এই বালিয়াড়ির মধ্যভাগে একটি উঁচুশৃঙ্গ দেখা যায় এবং তিন বা তিনের অধিক বালির শিরা বাইরের দিকে বিস্তৃত হয় । এই বালিয়াড়িকে বলে নক্ষত্র বালিয়াড়ি ।
( vi ) অর্ধবৃত্তীয় বালিয়াড়ি : অপসারণ প্রক্রিয়ায় মরুভূমিতে সৃষ্ট গর্তগুলির প্রতিবাত ঢাল থেকে বালি অপসারিত হয়ে অনুবাত ঢালে সঞ্চিত হলে দীর্ঘ চামচের মতো বা অধিবৃত্তের ন্যায় যে বালিয়াড়ি সৃষ্টি হয়, তাকে অধিবৃত্তীয় বালিয়াড়ি বলে ।
( vii ) হেয়ারপিন বালিয়াড়ি : বায়ুপ্রবাহের কারণে অধিবৃত্তীয় বালিয়াড়ি প্রসারিত হতে থাকে এবং দীর্ঘ, সংকীর্ণ ও সমান্তরাল পার্শ্বযুক্ত বালিয়াড়িতে পরিণত হয় , তাকে হেয়ারপিন বালিয়াড়ি বলে ।
( b ) অবস্থান অনুসারে বালিয়াড়ির শ্রেণিবিভাগ :
( i ) মস্তক বালিয়াড়ি : বায়ুর গতিপথে কোনো প্রস্তরখণ্ড বা টিলা অবস্থান করলে তার প্রতিবাত অংশে যে বালিয়াড়ি গড়ে ওঠে , তাকে মস্তক বালিয়াড়ি বলে ।
( ii ) পুচ্ছ বালিয়াড়ি : মরু অঞ্চলে কোনো বাধার পশ্চাতে পুচ্ছর মতো বহু দূর বিস্তৃত যে বালির স্তূপ গঠিত হয়, তাকে পুচ্ছ বালিয়াড়ি ।
( iii ) অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি : মস্তক বালিয়াড়ির আগে ঘূর্ণিবায়ুর জন্য যে বালিয়াড়ি গঠিত হয় ,তাকে অগ্রবর্তী বালিয়াড়ি বলে ।
( iv ) পরবর্তী বালিয়াড়ি : পার্শ্ব বালিয়াড়ির পরবর্তী পর্যায়ে এই বালিয়াড়ি গঠিত হয় ।
( v ) পার্শ্ব বালিয়াড়ি : বায়ুর প্রবাহপথে বাধার সৃষ্টি হলে বাধার দুপাশে বায়ু প্রবাহিত হলে যে বালিয়াড়ি গঠিত হয়, তাকে পার্শ্ব বালিয়াড়ি বলে ৷
লোয়েস : ‘লোয়েশ ’ শব্দের অর্থ স্থানচ্যুত বস্তু । মরুঅঞ্চলের একস্থানের সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ঈষৎ পীতাভ বালুকারাশি বায়ুর দ্বারা বাহিত হয়ে অন্যত্র জমা হলে তাকে লোয়েস বলে । উদাহরণ – মধ্য এশিয়ার গোবি মরুভূমি থেকে বালুকারাশি উড়ে চিনের হোয়াংহো নদী অববাহিকায় সঞ্চিত হয়ে লোয়েস সমভূমি গড়ে উঠেছে ।
বালির শৈলশিরা : বায়ুর গতিপথের সমান্তরালে বালি সঞ্চিত হয়ে সৃষ্ট বাঁধের ন্যায় ভূমিরূপকে বলে বালির শৈলশিরা ।
বালির তরঙ্গ : মরুভূমি অঞ্চলের ঈষৎ অসমতল ভূভাগের উপর লম্ফদান প্রক্রিয়ায় বায়ুপ্রবাহের সঙ্গে বাহিত বালুকারাশি অনুবাত ঢালে কম ও প্রতিবাত ঢালে বেশি সঞ্চিত হলে তাকে বালির তরঙ্গ বলে ।
বালির পাত : মরুভূমির অত্যন্ত সমতল অংশে বালির সঞ্জয়ের ফলে সৃষ্ট বালির পাতলা স্তরকে বালির পাত বলে ।