উত্তর : বাংলায় সশস্ত্র বিপ্লবী আন্দোলনের ইতিহাসে এক স্মরণীয় ঘটনা ছিল চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠন । এই অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাস্টারদা সূর্যসেন ।
( i ) উদ্দেশ্য : চট্টগ্রাম অস্ত্রাগার লুণ্ঠনের পরিকল্পনা করেন সূর্য সেন । তাঁর উদ্দেশ্য ছিল সশস্ত্র অভ্যুত্থান ঘটিয়ে এদেশ থেকে ব্রিটিশ সরকারকে উচ্ছেদ করা ।
( ii ) দল গঠন : এই উদ্দেশ্য সফল করার জন্য ১৯২৮ খ্রিস্টাব্দে তিনি ৬৪ জন বিপ্লবী ভাই -বোনদের নিয়ে গড়ে তোলেন ভারতীয় প্রজাতন্ত্রী বাহিনী । এর সদস্যগণ ছিলেন — লোকনাথ বল , গণেশ ঘোষ , নির্মল সেন , অনন্ত সিংহ , প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার , বীণা দাস প্রমুখ ।
( iii ) অস্ত্রাগার লুণ্ঠন : ১৯৩০ খ্রিস্টাব্দের ১৮ এপ্রিল প্রজাতন্ত্রী বাহিনী ৪ টি দলে বিভক্ত হয়ে চট্টগ্রামের পুলিশ ও সেনা অস্ত্রাগার, ইউরোপীয় ক্লাব এবং টেলিফোন ও টেলিগ্রাফ কেন্দ্র আক্রমণ করে । সেখান থেকে তারা প্রচুর গোলাবারুদ , বন্দুক, রিভলবার ইত্যাদি লুঠ করে এবং চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্নকরে দেয় । সেখানে তারা একটি অস্থায়ী স্বাধীন সরকার প্রতিষ্ঠা করে ।
( iv ) জালালাবাদের লড়াই : এই অবস্থায় ব্রিটিশ সরকার সামরিক বাহিনী তলব করে । তাই বিপ্লবীরা বাধ্য হয়ে চট্টগ্রামের জালালাবাদের পাহাড়ে আশ্রয় নেয় । সেখানে উভয় পক্ষের তুমুল যুদ্ধ হয় । ঘটনাস্থলেই ১১ জন বিপ্লবী ও সরকারি পক্ষের ৬৪ জনের মৃত্যু হয় ।
( v ) ফলাফল : বাধ্য হয়ে সূর্যসেন - সহ অন্যান্য বিপ্লবীরা আত্মগোপন করেন । শেষপর্যন্ত সূর্যসেন ধরা পড়েন । বিচারে তাঁর ফাঁসি ( ১২ জানুয়ারি , ১৯৩৪ খ্রিস্টাব্দ ) হয় । অন্যদিকে ইওরোপীয়ান ক্লাব আক্রমণকালে ( ১৯৩২ খ্রিস্টাব্দ ) প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার পটাশিয়াম সায়ানাইড খেয়ে আত্মহত্যা করেন । এইভাবে সূর্য সেনের নেতৃত্বে এই বিপ্লবী অভ্যুত্থানের যবনিকা পতন হয় ।
মন্তব্য : ঐতিহাসিক আর সি মজুমদার জালালাবাদের লড়াইকে ‘ ইংরেজদের সঙ্গে প্রত্যক্ষ সংগ্রামের প্রথম দৃষ্টান্ত’ বলে অভিহিত করেছেন ।