উত্তর : ভূপৃষ্ঠে জলরাশি যখন তরল রূপে পতিত হয় তখন তাকে বৃষ্টিপাত বলে । পৃথিবীতে সাধারণত তিন প্রকার বৃষ্টিপাত সংঘটিত হয় । যেমন— (1) পরিচলন বৃষ্টিপাত (2) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত (3) ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত ।
সংজ্ঞা : ভূপৃষ্ঠের জলরাশি সূর্যের তাপে উত্তপ্ত হয়ে জলীয় বাষ্পরূপে ঊর্ধ্বাকাশে উঠে সম্পৃক্ত , শীতল ও ভারী হয়ে সেই স্থানেই বৃষ্টিপাত রূপে পতিত হলে তাকে পরিচলন বৃষ্টিপাত বলে ।
কারণ : ভূপৃষ্ঠের জলরাশি সূর্যের তাপে ক্রমাগত উত্তপ্ত হয় এবং জলীয়বাষ্প গঠন করে হালকা হয় এবং ধূলিকণাকে আশ্রয় করে ঊর্ধ্বাকাশে উঠে যায় । এই বায়ু উপরে শীতল , ঘনীভূত ও ধীরে ধীরে সম্পৃক্ত হয়ে বৃষ্টিরূপে ঝরে পড়ে ।
উদাহরণ : সাধারণত নিরক্ষীয় ও ক্রান্তীয় জলবায়ুর দেশগুলিতে উষ্ণতা বেশি থাকায় সেই সকল দেশে পরিচলন পদ্ধতিতে বৃষ্টিপাত হয় । যেমন — ভারত , শ্রীলঙ্কা , মায়ানমার ।
(২) শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত : ‘শৈল ’ শব্দের অর্থ পর্বত এবং ‘উৎক্ষেপ’- এর অর্থ ওপরে ওঠা । জলীয়বাষ্পপূর্ণ বায়ুর প্রবাহপথে পর্বতের অবস্থান থাকলে সেই বায়ু পর্বতের ঢাল বরাবর উপরে ওঠে এবং শীতলতার সংস্পর্শে এসে বৃষ্টিপাত ঘটায় , একে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত বলে ।
পদ্ধতি : জলীয় বায়ু তার গতিপথে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত কোনো পর্বতে বাধা পেয়ে পর্বতের গা বরাবর উপরে উঠে যায় । জলীয় বাষ্পপূর্ণ বায়ুওপরে উঠে শীতল হয় এবং জলীয়বাষ্প ঘনীভূত হয়ে জলকণায় পরিণত হয় । জলকণাগুলি একে অপরের সঙ্গে যুক্ত হয়ে বড়ো হতে থাকে এবং পর্বতের যে ঢাল বরাবর ওপরে সেই ঢালেই ( প্রতিবাত ঢাল ) প্রচুর শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় । এরপর পর্বত অতিক্রম করে যখন বিপরীত ঢালে ( অনুবাত ঢাল ) পৌঁছোয় তখন বায়ুতে জলীয়বাষ্প থাকে না । পর্বতের অনুবাত ঢালটি বৃষ্টিপাতের অভাবে বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চলে পরিণত হয় ।
উদাহরণ : ভারতে মেঘালয়ে খাসি পাহাড়ের প্রতিবাত ঢালে অবস্থিত মৌসিনরামে জলীবাষ্পপূর্ণ দক্ষিণ - পশ্চিম মৌসুমি বায়ু বাধা পেয়ে শৈলোৎক্ষেপ বৃষ্টিপাত ঘটায় ( অনুবাত ঢালে অবস্থিত শিলং একটি বৃষ্টিচ্ছায় অঞ্চল ) ।
(৩) ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত : শীতল বায়ুর ঢাল বরাবর উষ্ণ বায়ু ঊর্ধ্বে উঠে ঘনীভূত হয়ে যে বৃষ্টিপাত ঘটায় তাকে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বলে ।
পদ্ধতি : শীতল বায়ুর ও উষ্ম বায়ুর সীমান্ত অঞ্চলে সৃষ্ট ঢাল বরাবর উষ্ণ বায়ু হালকা হয়ে ঊর্ধ্বে উত্থিত হয় ও ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত ঘটায় ।
উদাহরণ : প্রথমত , ক্রান্তীয় অঞ্চলে প্রবল নিম্নচাপ সৃষ্টি হলে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত হয় ।
দ্বিতীয়ত, নাতিশীতোয় অঞ্চলে শীতল ও উষ্ণ বায়ু পরস্পরের বিপরীত দিকে প্রবাহিত হলে সীমান্ত অঞ্চলে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত হয় ।
প্রসঙ্গ , পশ্চিমবঙ্গে গ্রীষ্মের শুরুতে যে কালবৈশাখী ঝড় হয় সেটি এক প্রকার ঘূর্ণিঝড় । এর ফলে যে বৃষ্টি হয় তাকে ঘূর্ণবাতজনিত বৃষ্টিপাত বলে । ভারত ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার দেশ গুলিতে গ্রীষ্ম ও শরৎকালে এই বৃষ্টিপাত দেখা যায় ।