বিশ শতকে ভারতে কৃষক আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা / অবদান কী ছিল ?

মাধ্যমিক দশম টেন ইতিহাস madhyamik class 10 x history questions answers প্রশ্নোত্তর বিশ শতকে ভারতে কৃষক আন্দোলনে বামপন্থীদের ভূমিকা অবদান কী ছিল bingsho shotoke bharate krishok andolone bamponthider bhumika obodan ki chilo


উত্তর : বিশ শতকে ভারতের জাতীয় আন্দোলনে যেমন কৃষকশ্রেণি যোগদান করেছিল , তেমনই কৃষক সংগঠনগুলিও আঞ্চলিকভাবে স্বতন্ত্র কৃষক আন্দোলন গড়ে তুলেছিল । এই আন্দোলনগুলি পরিচালনার ক্ষেত্রে বামপন্থীদের অবদান ছিল অনস্বীকার্য । 


( i ) পটভূমি : ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে রুশ বিপ্লবের পর ভারতের জাতীয়তাবাদী নেতৃবৃন্দের একাংশ বামপন্থায় বিশ্বাসী হয়ে পড়েন । বিপ্লবী নরেন্দ্রনাথ ভট্টাচার্য ছিলেন এমনই একজন নেতা । ১৯২০ খ্রিস্টাব্দে তিনি তাসখন্দে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠা করেন । এরপর ১৯২৫ খ্রিস্টাব্দে কানপুরে আনুষ্ঠানিকভাবে ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি প্রতিষ্ঠিত হয় । এরপর থেকেই ভারতের কৃষক আন্দোলন গুলি বামপন্থী মনোভাব দ্বারা পরিচালিত হয় । 


( ii ) অসহযোগ আন্দোলনের পর : একদিকে অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতা এবং অন্যদিকে কংগ্রেসি নেতৃবৃন্দের উদাসীনতায় ভারতের কৃষক শ্রেণি হতোদ্যম হয়ে পড়ে । এই অবস্থায় বামপন্থীরা কৃষকদের মধ্যে নিজেদের প্রভাব বিস্তার করতে সমর্থ হন । তাঁরা কৃষক আন্দোলনের নতুন কর্মসূচি রূপে ভারতে জমিদারি প্রথা উচ্ছেদের দাবি তোলেন । ফলে কৃষকরা উজ্জীবিত হয় । ক্রমে জওহরলাল নেহরুর নেতৃত্বে উত্তরপ্রদেশে , পাঞ্জাবে বাবা সোহন সিংযোশী ,বিহারে জয়প্রকাশ নারায়ণ, স্বামী সহজানন্দ সরস্বতী , মাদ্রাজে এন জি রঙ্গ , কেরলে নাম্বুদ্রিপাদ , বাংলায় বঙ্কিম মুখার্জির নেতৃত্বে ভারতের কৃষক আন্দোলন এক আলাদা মাত্রা পায় । 


( iii ) আইন অমান্য আন্দোলনের পর : ১৯৩৬ খ্রিস্টাব্দে স্বামী সহজানন্দ সরস্বতীর সভাপতিত্বে সারাভারত কিষান সভা প্রতিষ্ঠিত হয় । 

( a ) দাবিদাওয়া : এই সভার মূল দাবি ছিল — 

( ১ ) ভূমি রাজস্বের হার অর্ধেক করা । 

( ২ ) কৃষি ঋণগুলি সহজ কিস্তিতে শোধ করার সুযোগ । 

( ৩ ) বেআইনি করের বিলোপ সাধন করা ।

( ৪ ) খেতমজুরদের মজুরি বৃদ্ধি করা । 

( ৫ ) বেগার প্রথার বিলোপসাধন করা ।

( ৬ ) সেচ ব্যবস্থার উন্নতি করা ।

( ৭ ) জমিতে বর্গাদারদের স্থায়ী স্বত্ব প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি । 


( b ) কিষান আন্দোলন : ( ১ ) ১৯৩৭ খ্রিস্টাব্দের পর স্বামী সহজানন্দের নেতৃত্বে বিহারে বকস্ত আন্দোলন জোরদার হয় । 

( ২ ) এই সময় অন্ধ্র কিষান সভার নেতৃত্বে প্রায় ২০০০ কৃষক ১৩০ দিন ধরে ৯টি জেলা পরিক্রমণ করে । 

( ৩ ) বাংলায় বঙ্কিম মুখার্জির নেতৃত্বে কৃষকরা দামোদর খালের বর্ধিত করের বিরুদ্ধে সরব হয় । 

( ৪ ) ওড়িশায় মালতী চৌধুরির উৎকল কৃষক সভা সোচ্চার হয় । 

( ৫ ) বাংলায় ফজলুল হকের কৃষক প্রজাপার্টি, উত্তরপ্রদেশে জাতীয় কৃষক প্রজাপার্টি ও ওড়িশার  ঢেঙ্কানলে অনুরূপ কৃষক আন্দোলন ।

( ৬ ) ১৯৪৬ খ্রিস্টাব্দে বাংলার তেভাগা আন্দোলন এবং দক্ষিণ ভারতের তেলেঙ্গানা ও পুন্নাপ্রা-ভায়ালারের কৃষক আন্দোলন ছিল দৃষ্টান্তমূলক । 


মন্তব্য : কিন্তু দুঃখের বিষয় দুই বিশ্বযুদ্ধ মধ্যবর্তী সময়ে সংঘটিত কৃষক আন্দোলনগুলি তেমনভাবে সাফল্যলাভ করেনি । কারণ — এগুলি আঞ্চলিকভাবে গড়ে ওঠে ।  কৃষক আন্দোলন সম্পর্কে জাতীয় কংগ্রেসের অনীহা এবং সর্বোপরি বামপন্থীদের দুর্বলতা । স্বভাবতই কৃষকরা যে- তিমিরে ছিল, সেই তিমিরেই থেকে যায় । 




একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন