উত্তর : ভারতে একসময় ( খ্রিস্টপূর্ব 3000বছর ) সমগ্র ভূমিভাগের ৪০% বনভূমি অবস্থান করত । বর্তমানে তা হ্রাস পেয়ে 19.39 % দাঁড়িয়েছে । ভারতে বর্তমানে প্রতিবছরে 1% হারে ভূমি বন্ধ্যা ভূমিতে পরিণত হচ্ছে । আমাদের দেশে অরণ্য নিধনের কারণগুলিকে প্রধান দুটি ভাগে ভাগ করা হয় । যথা— (A) প্রাকৃতিককারণ (B) মানবিক কারণ ।
( A ) প্রাকৃতিককারণ : ( ১ ) দাবানল : বনভূমি অঞ্চলে গাছে গাছে ঘর্ষণের ফলে আগুনের সৃষ্টি হলে তাকে দাবানল বলে । এই দাবানলের কারণে মাইলের পর মাইল বনভূমির গাছ নষ্ট হয়ে যায় ।
( ২ ) ভূমিধস : পার্বত্য অঞ্চলে ভূমিধসের কারণে প্রায়ই অরণ্য অঞ্চল ধ্বংস হয়ে যায় ।
( 3 ) আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুৎপাত : আগ্নেয়গিরি অধ্যুষিত অঞ্চলে অগ্ন্যুগমের কারণে বিস্তীর্ণ অরণ্য অঞ্চলের উদ্ভিদ নষ্ট হয়ে যায় ।
( ৪ ) ঝড়ঝঞ্ঝা : মাঝেমধ্যে প্রবল ঝড়ঝঞ্ঝার কারণে বনভূমি অঞ্চলের অনেক বৃক্ষ উৎপাটিত হয় ।
( ৫ ) রোগ ও পোকার আক্রমণ : অরণ্যভূমিতে পঙ্গপালের আক্রমণ ও নানা প্রকারের রোগ ও পোকার আক্রমণে গাছপালা ক্ষতিগ্রস্ত হয় ।
( B ) মানবিক কারণ : ( ১ ) ঝুমচাষ বা স্থানান্তর কৃষি : পার্বত্য অঞ্চলের আদিম অধিবাসীরা নিজ প্রয়োজনে গাছপালা কেটে ও সেই স্থানটি পুড়িয়ে অরণ্যের কিছুটা অংশ পরিষ্কার করে কয়েক বছর কৃষিকাজ করে এবং সেই স্থানের উষ্ণতা হ্রাস পেলে আবার অন্যত্র গিয়ে সেখানেও গাছপালা কেটে পরিষ্কার করে কৃষিকার্য করে যা ঝুমচাষ নামে পরিচিত । এতে বনভূমির আয়তন হ্রাস পায় ।
( ২ ) উন্নয়নমূলক কার্য : জনসংখ্যার বৃদ্ধি এবং বিজ্ঞান ও যুক্তিবিদ্যার অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে অরণ্যের নিধন শুরু হয়েছে । বড়ো বড়ো প্রকল্প যেমন — রাস্তাঘাট তৈরি , জলাধার নির্মাণ, রেললাইন সম্প্রসারণ প্রভৃতির প্রয়োজনীয়তা অস্বীকার করা যায় না । কিন্তু এই প্রতিটি কর্মকাণ্ডেই পরিবেশজনিত সমস্যার সৃষ্টি হয় । এদের মধ্যে প্রধান হল ব্যাপকভাবে অরণ্য নিধন ।
( ৩ ) জ্বালানির চাহিদা : উন্নয়নশীল দেশগুলিতে জ্বালানির প্রয়োজন মেটাতে অসংখ্য গাছপালা কেটে বনভূমি ধ্বংস করা হয়েছে । ভারতের মতো উন্নয়নশীল দেশে ব্যবহৃত কাঠের 82 শতাংশই জ্বালানি হিসেবে ব্যবহৃত হয় । জ্বালানি কাঠের এই ক্রমবর্ধমান চাহিদা মেটাতে বনভূমির ওপর ক্রমাগত চাপ বৃদ্ধি পাচ্ছে ।
( ৪ ) বাণিজ্য ও শিল্পক্ষেত্রে কাঠের চাহিদা : প্যাকিং বাক্স, আসবাবপত্র , দেশলাই - এর বাক্স, প্লাইউড , কাগজ ও মণ্ড তৈরিতে ব্যাপকভাবে কাঠ ব্যবহার হয়ে আসছে । বিগত কয়েক দশকে শিল্পের প্রয়োজনে কমপক্ষে 3000 বর্গকিমি বনাঞ্চল সাফ করে ফেলা হয়েছে । ভারতে কাগজ শিল্পের জন্য 2% এবং চা শিল্পে বাক্সের জোগান দিতে 22% অরণ্যাঞ্চলের কাঠ ব্যবহার করা হয় । এ ছাড়া একাধিক উপজাত সামগ্রী বনাঞ্চল থেকে সংগ্রহ করা হয় । এই সমস্ত চাহিদা মেটাতে আমাদের দেশের অরণ্য সম্পদ আজ ধ্বংসের মুখে ।
( ৫ ) অনিয়ন্ত্রিত পশুচারণ : পাহাড়ি অঞ্চলের মানুষের জীবিকা অর্জন ও পশুজাত দ্রব্যের চাহিদার জন্য পশুচারণ বৃদ্ধি পাচ্ছে । পশুচারণের ফলে বনভূমির চারাগাছগুলি নষ্ট হয়ে যায় এবং পশুদের চলাচলে ভূমিক্ষয় হয়েবনভূমি ধ্বংস হয় ।
( ৬ ) অবৈজ্ঞানিক প্রথায় গাছকাটা : কাঠ ব্যবসায়ীরা অনেক ক্ষেত্রেই বনভূমিতে গাছ কাটার সময় সাবধানতা অবলম্বন করেন না । এতে বহু চারাগাছ ও অপরিণত গাছ নষ্ট হয়ে যায় ।
( ৭ ) পরিবেশ দূষণের প্রভাব : পরিবেশ দূষণের প্রভাবও বনভূমিকে প্রভাবিত করছে । শিল্পায়নের ফলে শিল্পকেন্দ্র থেকে উদ্ভূত গ্রিনহাউস গ্যাসের প্রভাবে অ্যাসিড বৃষ্টি হয় , যা বনভূমির বৃক্ষের , ক্ষতি করে ।