উত্তর : কবি কাজী নজরুল তাঁর সমগ্র জীবন , কর্ম ও কাব্যকীর্তি দিয়ে সমস্ত শোষণ , পীড়ন , বঞ্চনার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছেন । তাঁর প্রায় অধিকাংশ কবিতাই প্রতিবাদী কবিতা । তবে আলোচ্য “ প্রলয়োল্লাস ” কবিতাটির প্রতিবাদী কবিতা হিসেবে একটি বিশেষ স্থান রয়েছে । কারণ কাব্যজীবনের শুরুতে যে দুটি কবিতা নজরুল কে প্রতিষ্ঠা দিয়েছিল তাঁর একটি “ প্রলয়োল্লাস ” ও অপরটি “ বিদ্রোহী ” । বিদ্রোহী কবি একদিকে “ বিদ্রোহী ” কবিতায় নিজের অবস্থান স্পষ্ট করে দিয়েছেন এই বলে
“মহা বিদ্রোহী রণক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত
যবে উৎপীড়িতের ক্রন্দন রোল
আকাশে বাতাসে ধ্বনিবে না
অত্যাচারীর খড়গ কৃপাণ
ভীম রণভূমে রণিতে না
বিদ্রোহী রণ ক্লান্ত
আমি সেই দিন হব শান্ত ।”
অন্যদিকে “ প্রলয়োল্লাস ” এ বিবরণ দিচ্ছেন
“ ঝামার তাহার কেশের দোলায় ঝাপটা মেরে গগন দুলায় , সর্বনাশী জ্বালামুখী ধূমকেতু তার চামর ঢুলায় ।”
কবির অসাম্প্রদায়িকতা , ভারতীয়ত্ব , দেশাত্মবোধ , স্বাধীনতাপ্রিয়তা তাঁর অন্যান্য কবিতার মতো “ প্রলয়োল্লাস ” কেও জারিত করেছে । প্রলয় তথা বিপ্লবের আগমনী তাঁর লেখনীকে করেছে জ্বালাময়ী , শব্দচয়নে , ছন্দের বিভঙ্গে কবিতাটি প্রতিবাদী কবিতা তো বটেই , বিদ্রোহের বানীরূপ হয়ে উঠেছে । বিশ্বমানবতার মূর্ত প্রতীক নজরুল আহ্বান জানিয়েছেন “ তোরা সব জয়ধ্বনি কর ” । এ জয়ধ্বনি বিনাশের নয় । এ জয়ধ্বনি বিনাশ পরবর্তী নতুন আশার , যা রূপকথার ফিনিক্স পাখির মতো অগ্নিময় ধ্বংসস্তুপ থেকে বার্তা কে সঞ্চারিত করে ।