মিড ডে মিল রচনা

মাধ্যমিক বাংলা madhyamik Bangla রচনা প্রবন্ধ rochona probondho মিড ডে মিল রচনা mid day mil rochona


ভূমিকা : মিড ডে মিল ভারত সরকারের একটি জনকল্যাণমুখী প্রকল্প । প্রকল্পটির সঙ্গে বিদ্যালয় শিক্ষা ও শিক্ষার্থীদের স্বাস্থ্য ঘনিষ্টভাবে বিলাসিতামাত্র । কিন্তু নিরক্ষরতামুক্ত সুস্থ সরল ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গড়ে তোলবার জন্য প্রয়োজন দারিদ্রের সঙ্গে লড়াই করেও নতুন প্রজন্ম কে বিদ্যালয়মুখী করে তোলা । বিদ্যালয়ে গেলে যদি একটি শিশু বা কিশোর দুমুঠো খেতে পাবে এই প্রতিশ্রুতি দেওয়া যায় তবেই একজন দরিদ্র অভিভাবক তাঁর সন্তান কে বিদ্যালয়ে পাঠাবেন এই ভাবনা থেকেই মিড ডে মিলের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছিল ভারত সরকার । 


মিড ডে মিলের প্রয়োজনীয়তা : বিভিন্ন গবেষণা সংস্থার গবেষনা থেকে জানা যায় ভারতের শিশু কিশোরদের একটি বড়ো অংশই অপুষ্টি জনিত রোগে ভুগছে । ফলে তাদের স্বাভাবিক বৃদ্ধি হচ্ছে না , এমনকি ওজনও স্বাভাবিকের তুলনায় কম । সমীক্ষায় দেখা গেছে ৬ থেকে ৯ বছরের শিশুদের ৫৮.৬ শতাংশ , ১০ থেকে ১৩ বছরের কিশোরদের ৭৭.৯ শতাংশরই ওজন স্বাভাবিক ওজনের থেকে কম । অপুষ্টি জনিত কারণেই এমনটি ঘটছে । এই কারণে নিয়মিত পুষ্টিকর খাদ্য প্রদানের মাধ্যমে স্বাভাবিক শিশু কিশোর গড়ে তোলবার জন্যে এবং স্কুলছুট শিক্ষাথীর হার কমাবার জন্য নিয়মিত রান্না করা খাবার বিভিন্ন বিদ্যালয়ে ছুটির দিন বাদে প্রত্যহই পরিবেশন করার প্রকল্প নিয়েছে সরকার । এই প্রকল্পের নামই মিড ডে মিল প্রকল্প ।


প্রকল্পের স্বরূপ : স্বাধীনতা পূর্ববর্তী বা পরবর্তী কালে বিভিন্ন রাজ্যে বিক্ষিপ্ত ভাবে মিড ডে মিলের ব্যাবস্থা চালু ছিল । ভারত সরকার ও ১৯৫৮ - ৫৯ এ ইউনিসেফের সহযোগিতায় মিড ডে মিলের ব্যাবস্থা করেছিল , তবে এ বিষয়টি যথার্থ গুরুত্ব পেল ১৯৯৫ খ্রিস্ট: ১৫ আগস্ট থেকে । এই সময় ভারত সরকারের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল প্রোগ্রাম অফ নিউট্রিশন সাপোর্ট টু প্রাইমারী এডুকেশন চালু করেন । এই প্রোগ্রাম অনুযায়ী কয়েকটি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত পন্ডীচেরিতে রান্না করা খাবার পরিবেশন করা শুরু হয় । এই সময় পশ্চিমবঙ্গ সহ অন্য রাজ্যগুলিতে ৩ কেজি করে খাদ্যশস্য প্রতি শিক্ষাথীকে দশ মাস ধরে দেবার বন্দোবস্ত হয় । এই ব্যবস্থায় পড়ে পরিবর্তিত হয়ে সারা ভারতবর্ষে মিড ডে মিলে রূপান্তরিত হয় ।

মিড ডে মিলের কেন্দ্রীয় সরকারের একটি প্রকল্প হলেও এক্ষেত্রে রাজ্য সরকারেরও একটি ভূমিকা থাকে । ঠিক হয় এর ব্যয়ভার ৭৫ শতাংশ বহন করবে কেন্দ্রীয় সরকার এবং ২৫ শতাংশ বহন করবে রাজ্য সরকার । কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্য গুলিকে বিনামূল্য খাদ্য শস্য সরবরাহ করবে । সেই সঙ্গে রান্নার ব্যাবস্থা , পরিবহন , পরিশ্রুত জল প্রভৃতি বিষয় গুলির ভার কেন্দ্র ও রাজ্য উভয়েই বহন করবে । পরে সুপ্রিমকোর্টের নির্দেশ অনুসারে সিদ্ধান্ত হয় রান্না ঘরের ব্যাবস্থা অর্থাৎ রান্না করবার উপযুক্ত পরিকাঠামো তৈরী করবে কেন্দ্র সরকার । রাঁধুনি ও সহকারী দলিত শ্রেণীর মানুষদের মধ্য থেকে নিয়োগ করতে হবে । 

প্রকল্পের বর্তমান অবস্থা : সারা ভারতবর্ষের প্রতিটি রাজ্যেই এই প্রকল্পটি বর্তমানে চালু রয়েছে । তবে সর্বত্র এখনও চালু করা সম্ভব হয়নি । বর্তমানে প্রায় ১২ কোটি ছাত্র ছাত্রী এই প্রকল্পের সুবিধা পাছে । প্রকল্পটি চালু করতে গেলে আরও সরকারি অনুদান প্রয়োজন । কারণ বহু স্কুলেই রান্না করার মতো উপযুক্ত বন্দোবস্ত নেই , বহু স্কুলে পানীয় জলের ব্যাবস্থা নেই । 


উপসংহার : মিড ডে মিল ভারত সরকারের একটি জনকল্যাণমুখী প্রকল্প । প্রকল্পটি ভালো তবে সীমাবদ্ধতা অনেক । অনেকক্ষেত্রেই খাদ্য সামগ্রীর গুণগত মান ভালো থাকে না । যথার্থ স্বাস্থ্যবিধি মেনে রান্নার বন্দোবস্ত করা যায় না । পুষ্টিমূল্যও সর্বত্র সঠিক থাকে না , অবহেলার খাদ্য খেয়ে অনেক সময়ই শিক্ষার্থীরা অসুস্থ হয়ে পড়ে । আবার যথেষ্ট সহযোগীর অভাবে অনেক সময় শিক্ষক শিক্ষাকেই এই কাজে এগিয়ে আসতে হয় । এতে দৈনন্দিন পড়াশোনাও যথেষ্ট ক্ষতি হয়ে থাকে বলে অভিজ্ঞ মহল মনে করে ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন