সুনামি রচনা

মাধ্যমিক বাংলা madhyamik Bangla রচনা প্রবন্ধ rochona probondho সুনামি রচনা sunami rochona


ভূমিকা : বিজ্ঞানের বলে বলীয়ান আমরা পৃথিবীর মানুষ সভ্যতার দর্পে বলে চলেছি “ প্রকৃতি আমাদের করায়ত্ত ও বশীভূত ” কিন্তু এ ধারণা সর্বাংশে সত্য নয় । প্রকৃতির রুদ্র রোষ , ভ্রুকুটিকুটিল নয়নের লেলিহান শিখা যে ধ্বংসের তান্ডবলীলা সৃষ্টি করে , তাতে বিজ্ঞানবাদী সভ্য মানুষ বড়োই অসহায় । তার উজ্জ্বল প্রমাণ ২০০৪ খ্রিস্ট: ২৬ ডিসেম্বর । সমুদ্র দানব রূপে সুনামির অতকীত আবির্ভাব ভারত তথা পৃথিবীর মানুষকে চমক দিল ।

সুনামির আবির্ভাব : সেদিন রবিবারের ছুটির সকাল । বিগত রাতের বড়ো দিনের আনন্দ উৎসবের রেশ তখনও কাটেনি । বাইরে পৃথিবীতে প্রাত্যহিক কর্মজীবনের ছন্দ আর পাঁচটা দিনের মতোই স্বাভাবিক । সহসা সুনামির আবির্ভাব । সামুদ্রিক জলোচ্ছাসে ভাসিয়ে নিয়ে গেল সব । 

এর নিট ফল হল , ভারত মহাসাগরের উপকূল সীমানায় অবস্থিত তেরো টি দেশের প্রভূত ক্ষয়ক্ষতির সঙ্গে সঙ্গে দু লক্ষ বত্রিশ হাজার মানুষের মৃত্যু অথবা চিরতরে হারিয়ে যাওয়া , উপকূল অঞ্চলে ব্যাপক ভৌগোলিক পরিবর্তন এবং কোটি কোটি টাকার সম্পদের বিনাশ ।

সুনামি কি ? : প্রশ্ন হল “ সুনামি ” আসলে কি ? “ সুনামি ” শব্দটি হল জাপানি , এই শব্দের আক্ষরিক অর্থ লম্বা । “ বন্দরের জলোচ্ছাস ” কে জাপানিরা এই ছোট্ট শব্দটি দিয়েই বুঝিয়ে থাকে । সুনামির ভয়ংকর এই ঢেউয়ের জনক হল সমুদ্রতলে ঘটে যাওয়া ভূমিকম্প ।

সুনামির কারণ : ভূপৃষ্ট কয়েকটি খন্ড খন্ড “ টেকটনিক প্লেটের ” ওপর গড়ে উঠেছে । এই টেকটনিক প্লেট গুলো পৃথিবীর ভূপৃষ্ঠের নীচের ম্যাগমা স্তরের ওপর অতি ধীর গতিতে ভেসে বেড়াচ্ছে । মাঝে মাঝে প্লেট গুলো একটির ওপর আর একটি উঠে গিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে । এর নিট ফল হল ভূমিকম্প । সাগরতলে এই ধরনের ভূমিকম্প থেকেই সুনামির উৎপত্তি হয় ।

সুনামির প্রভাব : ২০০৪ খ্রিস্ট : ২৬ ডিসেম্বর তারিখে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের তলদেশে অবস্থিত ভারতীয় প্লেটটি বর্মা প্লেটের ওপর হটাৎ পিছলে ঢুকে যাওয়ায় ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপের প্রায় ৪০ কিলোমিটার নীচে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় , রিখটার স্কেলের এই ভূমিকম্পের মান ছিল ৮.৯ । এই ভূমিকম্প থেকে যে বিপুল শক্তি উৎপন্ন হয় তার পরিমাণ ছিল প্রায় ২০ কোটি টন “ ট্রাই নাইট্রো টলুইন ” শক্তির সমপরিমাণ বিস্ফোরণের সমান শক্তি সম্পন্ন । সমুদ্রতলে উৎপন্ন এই বিপুল পরিমাণ শক্তি সমুদ্রগর্ভের নীচের স্তরের জলকে প্রায় ৫০০ থেকে ৬০০ কিলোমিটার গতিতে ওপরে ঠেলে পাঠায় । এরপর বিশাল বিশাল সামুদ্রিক ঢেউ পাড়ি জমায় উপকূলের দিকে । এই সুনামির ফলে ভারত মহাসাগর ও বঙ্গোপসাগরের অনেক ছোটোখাটো দ্বীপ সমুদ্রের জলের তলায় তলিয়ে যায় । সেই সঙ্গে ভারতের উপকূলভাগ ও আন্দামান নিকোবরের নিম্নাঞ্চল জলে তলিয়ে যায় । সুনামির ফলে সমুদ্রতীরবর্তী এলাকার বহু বাড়ী ঘর ও কৃষিজমি জলের তলায় চলে গেছে 
। বহু মৎস্যজীবির নৌকা জলে ভেসে গেছে ।


ভৌগোলিক ক্ষয়ক্ষতি : সুনামির ফলে দক্ষিণ ও দক্ষিণ পূর্ব এশিয়ার মোট তেরোটি দেশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে , এর মধ্যে ইন্দোনেশিয়া , মালয়েশিয়া , থাইল্যান্ড , শ্রীলঙ্কা , মালদ্বীপ ও ভারতের দক্ষিণ উপকূলের অবস্থা ছিল সবচেয়ে শোচনীয় । ভারতের আন্দামান ও নিকোবর দ্বীপপুঞ্জ , তামিলনাড়ু , পন্ডিচেরি ও অন্ধ্রের উপকূল ভাগের ক্ষতির পরিমাণ ছিল সবচেয়ে বেশী । সুনামির পরবর্তী সময়ে একমুহূর্তও সময় নষ্ট না করে ভারত সরকার ও ত্রাণ সামগ্রী নিয়ে উদ্ধার ও ত্রাণের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে । পৃথিবীর বিজ্ঞানবাদী মানুষের কাছে সুনামি প্রমাণ করেছে প্রকৃতির কাছে এখনও আমরা কত অসহায় । সুনামি সতর্কীকরণ ব্যাবস্থা চালু করতে পারলে কিছুটা বিপদ কমবে বলে মনে  হয় । 


উপসংহার :       “ এক চোখে যাঁর খরার আগুন ,
                              আর এক চোখে বন্যা ,
                              সেই প্রকৃতি বিশ্বমাতার 
                              হাসির সুরে কান্না ।”

সেই কান্না থামাতে ঈশ্বরের কাছে সমবেত প্রাথনা ছাড়া আর কি উপায় ? 





একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন