প্রাত্যহিক জীবনে জল রচনা

মাধ্যমিক বাংলা madhyamik Bangla রচনা প্রবন্ধ rochona probondho প্রাত্যহিক জীবনে জল রচনা pratyohik jibone jol rochona


ভূমিকা : জলের অপর নাম জীবন । মানুষ সহ প্রাণী ও উদ্ভিদের প্রাণ প্রবাহের অন্যতম প্রধান উপাদান হল জল । মানব শরীরের একটা বড়ো অংশ জলীয় উপাদানে গঠিত । মানব জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে জলের অনিঃশেষ উপযোগিতা । জল ছাড়া জীবনের একটি দিনও অচল । এই কারণে জলকে জীবনের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে । 


জলের ব্যাবহার : জল ছাড়া আমাদের জীবনের একটি দিনও অতিবাহিত হয় না । পৃথিবীর তিনভাগ জল ও একভাগ স্থল হলে কি হবে , জল এখন দুর্লভ হয়ে উঠেছে , বিশেষ করে পানীয় জলের সংকট বেড়ে চলেছে । বৃহত্তর জীবনের পাশাপাশি প্রাত্যহিক জীবনেও জলের অপরিহার্যতা প্রসন্না প্রসন্নতিত । বৃহত্তর জীবনে পানীয় জল থেকে শুরু করে কৃষিকাজ , শিল্প উৎপাদন , ধোলাই মোছাই , স্নান থেকে তর্পণ সব কিছুতেই জলের অনিবার্য উপযোগ । গ্রাম হোক বা শহর , কুটির হোক বা প্রাসাদ , স্থল হোক বা অন্তরীক্ষ সর্বত্রই জলের অনিবার্য উপস্থিতি । অর্থাৎ বৃহত্তর জীবনে জলের উপযোগিতা অনস্বীকার্য ।

[       ] প্রাত্যহিক জীবনেও জলের নিত্য উপযোগিতা অস্বীকার করা যায় না । সকালবেলায় ঘুম ভাঙার সঙ্গে সঙ্গে চোখ থেকে ঘুম তাড়াতে শীতল জলের স্পর্শ কে অবহেলা করবে । তারপর মুখ ধোয়া এবং বাথরুমে জলের অপ্রতুলতা মানেই হইচই , অসন্তোষের ব্যাপার । এবার খবরের কাগজ চোখের সামনে ধরে হাতে চায়ের যে কাপটি তুলে নিই তা তো ফোটানো জলের দান । মা ততক্ষনে রান্না বসিয়েছেন । জল সেখানে অপরিহার্য । হাঁড়ি কুড়ি , থালা বাসন পরিষ্কার জলে ধুয়ে দিয়ে গেছে কাজের মাসি । সে যত্ন করে আনাজ কেটে , মাছ কেটে জলে ধুয়ে মায়ের হাতের কাছে জুগিয়ে দিয়ে গেছে । মা জলে চাল ধুয়ে হাঁড়ির ফুটন্ত জলে ভাত চড়িয়েছেন । পাশের উনানে ছোটো ভাইয়ের জন্য জল ফোটাতে দিয়েছেন । সে ফোটানো জল ঠান্ডা হলে খাবে । ওয়াটার বটলে ওই ফোটানো জল আমি স্কুলে নিয়ে যাই । বাড়িতে অবশ্য ওয়াটার ফিলটার আছে । ফিলটারের পরিশ্রুত জল সকলে ব্যাবহার করে । আজকাল ডাক্তারবাবুরা বলেন জল থেকে নানারকম অসুখ হয় , তাই পরিশ্রুত জল ব্যাবহার করাই ভালো ।


[        ] জল যে শুধু পান করার জন্য লাগে তা নয় , জল ছাড়া চা , দুধ , খাদ্যপানীয় কিছুই বানানো সম্ভব নয় । নিত্যদিন ওষুধ খেতেও জল লাগে । গ্রীষ্মের দিনে সাওয়ারে স্নান করার মজাটা ভুলি কি করে ? শীতে গিজারের জলের উষ্ণ আমেজ কেই বা পছন্দ করে না ? প্রত্যহের জামা কাপড় কাচার জন্য প্রচুর জল লাগে । হাত  , পা ধোয়াতো আছেই ।


[       ] প্রত্যহ ঘরের টেবিলের ওপর ফুলদানিতে ফুল গুলো যে টাটকা তাকে তারও কারণ তার গোড়াতে জলের ছোঁয়া । ছাদের টবে ফুলের গাছে যে সবুজের সমারোহ আর পুষ্পশোভা , তার জন্যও তো প্রতিদিন সকাল বিকাল জল দেওয়া প্রয়োজন । জানলার কার্নিশে পাখি গুলো এসে বসলে মা তাদের ছোলা মুড়ি বিস্কুট আর জল দেন । বলেন প্রাণীদের সেবা করাও মানুষের ধর্ম । অতিথিকে জলদান ভারতীয় অতিথি সেবার অন্যতম অঙ্গ । 

[       ] এতে গেল সাধারণ গৃহস্থ ঘরের প্রাত্যহিক জীবনে জলের উপযোগিতার কথা । কিন্তু একজন কৃষকের প্রাত্যহিক জীবনে জল তার পানের চেয়েও বেশি মূল্যবান , কারণ জলসেচ ছাড়া স্বপ্নের ফসল ফলবে না । একজন শ্রমিকের কাছেও জল অপরিহার্য , তার সঙ্গী যন্ত্র ও যে জল গ্রহণ করে । একজন জেলের জীবিকার প্রধান কেন্দ্র হল জল ও জলাভূমি । একজন তাঁতির সুতো রাঙাতে জলের প্রয়োজন , কুমোরের মাটি ভেজাতে জলের প্রয়োজন । এইভাবে সমস্ত সমাজে মানুষের প্রাত্যহিক জীবনের প্রয়োজন মিটিয়ে চলেছে জল ।


জলের অপব্যাবহার : জীবনদায়ী জলকে আমরা সযত্নে সংরক্ষণ করতে পারি না । অপচয় , অপব্যাবহার করে আমরা জল সম্পদকে অমর্যাদা করছি । ঠিকমতো জল ব্যাবহার করা ও করতে শেখানোর জন্য আমাদের গণসচেতনা বাড়াতে হবে । জলকে নানাভাবে দূর্ষিত করে জলকে ব্যাবহারের অযোগ্য করে তুলছি । জলকে নির্মল রাখার জন্য সার্বিক প্রয়াস প্রয়োজন । ভূগর্ভস্থ জলে আর্সেনিক বা আরও অনেক মারণ জীবাণু থাকায় তা আমাদের সুস্বাস্থ্যের সহায়ক নয় । মাটির ওপরের জলকে ব্যাবহারযোগ্য করার জন্য উদ্যোগী হওয়া দরকার । 

উপসংহার : জীবনে ও প্রাত্যহিক জীবনে সবরকম জলের প্রয়োজন । কোনো জল পান করার জন্য , কোনো জল অন্য কাজে ব্যাবহারের জন্য । নিত্যব্যবহার্য জলের অতি ব্যাবহার ও অপব্যাবহার রোধ করা প্রয়োজন । সামাজিক জীবনে জলাভাব যে কি ধরনের অসন্তোষের কারণ হয় তা সংবাদপত্রে রোজই আমরা দেখতে পাই । তাই জল হল আমাদের প্রাণ , জলই জীবন । আমরা সবাই মিলে যদি জলকে নির্মল রাখার প্রয়াস না নিই , তাহলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের তার মাশুল গুনতে হবে 


একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন