তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র রচনা

মাধ্যমিক বাংলা madhyamik Bangla রচনা প্রবন্ধ rochona probondho তোমার প্রিয় চলচ্চিত্র রচনা tomar priyo cholochitro rochona



ভূমিকা : আমাদের একান্নবর্তী পরিবারে ছোটোদের সিনেমা বা চলচ্চিত্র দেখার অনুমতি ছিল না । টিভি থাকেলও তার সামনে বসা যেত না । কিন্তু গত বছর টিভির সামনে ডেকে নিলেন স্বয়ং কাকাই , টিভিতে তখন বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখা ‘ পথের পাঁচালী ’ শুরু হয়েছে । দুর্গা ছেঁড়া কাঁথার মধ্যে আঙুল ঢুকিয়ে ফাঁক করতেই দেখা গেল ডাগর চোখ মেলে তাকিয়ে আছে অপু , এরপর অনেকদিন কেটে  গেছে , কিন্তু এখনও চোখ খুললেই দেখতে পাই রেলগাড়ী দেখার অনন্ত কৌতূহল বুকে নিয়ে দুর্গা আর অপুর মাঠ , খেত পার হয়ে ছুটে চলা , কিংবা ঝড় বাদলের সেই ভয়ংকর রাতে দুর্গার চলে যাওয়া । সেই ভালোলাগা অনুভুতি এখনো আমার সমস্ত মনে ছড়িয়ে রয়েছে । 

চলচ্চিত্রের নেপথ্যকথা : “ পথের পাঁচালী ” সত্যজিৎ রায়ের প্রথম ছবি । মুক্তি পেয়েছিল ১৯৫৫ সালে । স্বাধীনতা পরবর্তী এই সময়ে আজকের প্রযুক্তির প্রয়োগ চলচ্চিত্র শিল্পে একেবারেই ছিল না । তখন সবেমাত্র মুক সিনেমা সবাক হয়েছে । সেই সময় কাব্যধর্মী একটি উপন্যাসকে চলচ্চিত্রের বিষয় করে তোলা অত্যন্ত দুঃসাহসিক একটি কাজ ছিল , তবে এ কাজে তাঁকে আর্থিক সহযোগিতা করেছিল তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গ সরকার । 

[      ] “ পথের পাঁচালীর ” কাহিনী অত্যন্ত সাধারণ । হরিহর সর্বজয়ার অভাবের সংসার । হরিহর দরিদ্র ব্রাহ্মণ , যজমানি করে সংসার চালায় কোনমতে । মাঝে মাঝেই রোজ গারের সন্ধানে অন্য গ্রামে চলে যায় । সর্বজয়া অসহনীয় দারিদ্র্য , অনাহার , অধাহারে থাকতে হয়ে উঠেছে মুখরা , স্বার্থপর , বিধবা ননদ ইন্দিরা ঠাকুরণ কে মনে হয় গলগ্রহ । তবু তার মধ্যে ফুটে উঠেছে চিরন্তন বাঙালী নারী যিনি স্বামীর জন্য অপেক্ষা করেন , সন্তানদের মুখে দুটো অন্ন তুলে দেবার জন্য দিনরাত পরিশ্রম করেন । তাকে একেবারেই পাথর হয়ে যেতে দেখি একমাত্র মেয়ে দুর্গার বিনা চিকিৎসায় মৃত্যুতে । 


বিভিন্ন দৃশ্য : পথের পাঁচালী সিনেমার অনেকগুলি দৃশ্যই মনে স্থায়ী দাগ কেটে যায় । সবথেকে মনস্পর্শী দুটি দৃশ্য হল ইন্দিরা ঠাকরুন ও ঝড় জলের রাতে দুর্গার মৃত্যু দৃশ্য । ইন্দিরা ঠাকরুনের চরিত্রে চুনিবালা দেবীর অভিনয় অসামান্য । আরও কয়েকটি দৃশ্য মনে পড়ে । যেমন দুর্গার পুন্নি পুকুর ব্রত পালন , আকাশে প্রথম কাল বৈশাখীর ঘন মেঘের আনা গোনা ও দুর্গার বৃষ্টিতে ভেজা । বৃষ্টিতে ভিজে দুর্গার অসুখ আর তারই ফলে মৃত্যু । এমনকি ক্ষুধার্ত বিড়ালটি যে খাবার সন্ধানে ঘুরে বেড়াচ্ছে , যে আরশোলা টা ইন্দিরা ঠাকরুনের মৃত দেহের উপর দিয়ে ঘুরে বেড়াচ্ছে তারও যেন একটা ব্যাক্তিত্ব আছে । এমনকি ঝড়ে কেঁপে ওঠা দরজার ও যেন একটা মুখ আছে ।

উপসংহার : সত্যজিৎ রায়ের “ পথের পাঁচালী ” বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের “ পথের পাঁচালী ” থেকে একটু আলাদা । শোনা যায় সিগনেট প্রেস কৃত সংস্করণের ইলাস্ট্রেশন করতে করতেই ছবির চিত্রকল্প তাঁর মাথায় আসে । “ পথের পাঁচালী ” মুক্তি পাওয়ার পর চলচ্চিত্র সমালোচক দেবকী কুমার বসু লিখেছিলেন “ একটা ছবি যে এভাবে তোলা যায় , সে সম্পর্কে আমার কোনো ধারনাই ছিল না । সত্যজিৎ রায় আমাদের পথ প্রদশক হয়ে রইলেন ।” সেই মুগ্ধতা আজও বাঙালীর মনে রয়ে গেছে । তাই “ পথের পাঁচালী ” আমার প্রিয় চলচ্চিত্র ।



একটি মন্তব্য পোস্ট করুন (0)
নবীনতর পূর্বতন